জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় | Home Remedies to Reduce Fever

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় | Home Remedies to Reduce Fever

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আশা করছি ভালই আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে গুরুত্বপূর্ণ টপিকস নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আপনারা সবাই আজকের আলোচনা মনোযোগ সহকারে শুনবেন।

জ্বর

কমবেশি আমরা সবাই অসুস্থ হই। আমাদের অসুস্থতার মধ্যে জ্বর হচ্ছে অন্যতম। জ্বর ছোট বড় সকল বয়সের মানুষেরই কম বেশি হয়ে থাকে।তো আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব যে, জ্বর হলে কিভাবে ঘরোয়া ভাবে জ্বর প্রতিরোধ করবেন? চলুন কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাই। আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

জ্বরের প্রকারভেদ

শরীরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রা থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলেই তাকে জ্বর বলা হয়। কম বেশি জ্বর হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। আবার অনেকেই আছেন জ্বরে ভোগে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছিলেন। দুই তিন দিন থেকে তারপরে আপনা আপনি ভালো হয়ে যান। আবার কারো কারো জ্বর এক সপ্তাহের বেশি পরিমাণে থাকে। বিজ্ঞানীরা জ্বরকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন:

১/ ইন্টারমিটেন্ট জ্বর: যখন শরীরে জ্বর এসে কয়েক ঘন্টা থেকে আবার চলে যায় আবার কিছুক্ষণ পরে আসে এইভাবে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে তখন এই জ্বরকে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বলে।

২/ কন্টিনিউড জ্বর: যখন শরীয়ত তাপমাত্রা একদিনের মধ্যে অর্থাৎ 24 ঘন্টার মধ্যে দেড় ফারেনহাইট তারতম্য হয়, কিন্তু জ্বর সবাইকে অবস্থায় আসে না তাকে কন্টিনিউড জ্বর বলে।

৩/ রেমিটেন্ট জব: যখন শরীরের তাপমাত্রা একদিনে  তিন ফারেনহাইট এর মধ্যে তারতম্য হয়, একে রেমিটেন্ট জ্বর বলে।

জ্বর কেন হয়

নানান কারণে জ্বর হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে জ্বর হয়, আবার সর্দি কাশি থেকেও অনেক সময় জ্বর হয়। ঠান্ডা জনিত কারণে জ্বর হয়ে থাকে, অনেক সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে জ্বর হয়, পুকুরের পানিতে বা নদীর পানিতে বা টেপের পানিতে অধিকক্ষণ গোসল করলে জ্বর হয়, আপনি যদি অনেক সময় ধরে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে থাকেন বা অধিক তাপমাত্রার মধ্যে থাকেন তাহলে আপনার জ্বর হতে পারে, শরীরের কোন অংশে ফোড়া উঠলে সেই ফোড়ার আর ব্যথার কারণেও জ্বর হয়, শরীরের কোন জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা পেলে সেই ব্যথা জনিত কারণে জ্বর হয়, আমার শরীরের ভিতরে ভাইরাসজনিত ও ব্যাকটেরিয়াজনিত আক্রমণের কারণেও জ্বর হতে পারে, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে মিশলে বা সে রোগীর কোন কিছু ব্যবহার করলেও জ্বর হয়, পানিবাহিত কারণে জ্বর হতে পারে আবার বায়ু দূষণের ফলেও জ্বর হয়।

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

তো জ্বর হলে অনেকেই টেনশনে পড়ে যান, জ্বর হলেই অনেকে দৌড়ে ডাক্তারের কাছে চলে যান এবং ওষুধ খান। আবার অনেকে আছেন এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। তো এটা করা কখনোই ঠিক না। অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হয়ে ঔষধ খাওয়া দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা কখনই ঠিক না। জ্বর প্রতিরোধে প্যারাসিটামল ঔষধ খেতে পারেন। তবে জ্বর কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনারা সহজেই জ্বর কমাতে পারবেন।  তো কি সেই উপায়গুলো, সেগুলো আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব। তো চলুন দেখে আসি কি সেই উপায়গুলো:

১/ মাথায় পট্টি দেওয়া:

জ্বর হলে ঘরোয়াভাবে এই কাজটি করতে পারেন। চাইলে মাথায় পট্টি দিতে পারেন। হয়ত এই কাজটি আপনার নিজের করতে কষ্ট হবে। তো আপনার ফ্যামিলির কোন সদস্যকে দিয়ে করাতে পারেন। একটা বাটিতে কিছু পরিমাণে পানি নিবেন। সেখানে ছোট একটি কাপড়ের টুকরা ভিজিয়ে আপনার মাথায় দিয়ে দিতে হবে। দুই মিনিট পরে সেই ভেজা কাপড়ের টুকর গরম হয়ে যাবে আপনার কপালে তাপমাত্রার কারণে। দুই মিনিট পরে আবার সেই কাপড়টি বাটির পানিতে ভিজিয়ে আবার কপালে সোজাসুজি লম্বা আকারে দিয়ে দিতে হবে। এভাবে এক ঘন্টার মত করতে হবে। তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যাবে এবং জ্বর সম্পূর্ণভাবে চলে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

২/তুলসী পাতার রস খাওয়া:

একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে গরম হতে দিন চুলের উপর। এরপর ৮ থেকে ১০ টা তুলসী পাতা নেন। সেগুলো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। এরপর পাতাগুলো গরম পানিতে ছেড়ে দিন। ব্যাস, হয়ে গেল। পানি যখন ফুটবে পাতাগুলোসহ তো তারপরও এইভাবে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার এই পানিগুলো প্রতিদিন সকালে এক কাপ করে খাবেন। তুলসী পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিবায়োটিক উপাদান শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। যার ফলে আপনার জ্বর কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও গলা ব্যথা, সর্দি, কাশিসহ আরো কিছু রোগ কমাতে তুলসী পাতার রস ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।

৩/ মধু লেবুর রস এবং গরম পানি মিশ্রিত পানি:

জ্বর কমানোর জন্য মধু, লেবুর রস এবং গরম পানি মিশ্রিত পানি খুবই উপকারী। এক চা চামচ মধু নেন, সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস এবং এক কাপ গরম পানি। সবগুলো একসাথে মিক্সড করে নিন। ব্যাস হয়ে গেল। এবার এই পানি দিনে দুইবার এক কাপ করে খান। দেখবেন শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেছে। কারণ মধুতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল শরীরের ভাইরাসজনিত জ্বর কমাতে সহায়তা করে।

তাছাড়া লেবু এবং মধু উভয়ই শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে। যার ফলে আপনার শরীরের জ্বর কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

৪/লেবুর রস আদার রস ও মধু:

এক চা চামচ মধু , আধা চা চামচ আদা, এক চা চামচ, লেবুর রস একসাথে মিক্সড করে সেই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চারবার খাইলে জ্বর এমনিতেই কমে যায়।

কারণ আদা হল একটি প্রাকৃতিক এন্টিভাইরাস। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। যার ফলে আপনার জ্বর অটো ভাবে কমে যাবে।

৫/ আদা দিয়ে জ্বরের সমাধান: 

এক চা চামচ মধু নেন এবং আধা চা চামচ আদা বাটা নিন। এবার পানি নিয়ে তাতে আবার মিশ্রণ দিয়ে দিন এবং গরম হতে দিন। তো পানি গরম হওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে সেই পানির সাথে মধু মিক্সড করে নিন। তো এই মিশ্রণ দিনে তিন থেকে চারবার খেলে জ্বর সহজেই কমে যাবে।

৬/রসুন এবং গরম পানি:

বড়সড় একটা রসুন এবং এক কাপ গরম পানি নিন। এরপর রসুনগুলোর কোয়া ছাড়িয়ে সেই কোয়াগুলো গরম পানিতে মিশিয়ে দিন। এরপর ১০-১৫ মিনিট পরে সে কোয়াগুলো ছাকনি দিয়ে ছেঁকে তুলে ফেলুন এবং পানিটা খেয়ে নিন। এভাবে দিনে দুই বেলা করে রসুনের পানি খান। দেখবেন জ্বর এমনিতেই কমে যাবে। তবে এটি শুধুমাত্র গর্ববতী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুরা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

৭/রসুন ও অলিভ অলিভ অয়েল:

কয়েকটা রশুন নিয়ে পাটা এবং পুতা দিয়ে ছেছে নিন। এরপর অলিভ অয়েল রসুনের এর সাথে মিক্সড করে, সেই মিক্সার গুলো পায়ের তালুতে লাগিয়ে দিন। এরপর পায়ের তালুতে রসুনের বরাবর একটি কাপড়ের টুকরা পেঁচিয়ে সারারাত শুয়ে থাকুন। সকালে উঠে দেখবেন আপনার জ্বর সেরে গেছে। 

শেষ কথা 

তো বন্ধুগণ আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা খুব সহজেই জ্বর প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায় গুলো জানতে পেরেছেন।  আপনাদের কারো যদি জ্বর হয় তাহলে জ্বর নিয়ে আর বেশি টেনশন করতে হবে না। আপনারা খুব সহজেই ঘরোয়া ভাবে আপনাদের নিজেদের চিকিৎসা নিজেরাই করতে পারবেন। আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি দ্বারা আপনাদের কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে। আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে দিবেন। এই ধরনের আর্টিকেল সব সময় পেতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করবেন। এতক্ষণে সময় দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোন আর্টিকেলে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।


আরো জানুন:

মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন