শবে বরাতের ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক আশা করছি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন।আজকের রাত্রিও হচ্ছে একটি রহমতের রাত। অর্থাৎ আজকে হচ্ছে শবে বরাতের রাত। তো আপনারা কি শবে বরাত সম্পর্কে সম্পন্নভাবে জানেন কিনা? এই শবে বরাত মানে কি এবং কেন এই দিনটি পালন করা হয়, কেন এই রাতে সকল মুসলিম জাতি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে? হয়তো অনেকেই জানেন না। আজকে আমি সে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। তো আমাদের আলোচনায় চলে যাই। আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
পবিত্র রমজান মাসের শুরু হওয়ার 15 দিন আগে শবে বরাত এর রাত হয়ে থাকে। হিজরী বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিনটিকে শবে বরাত হিসেবে ধরা হয়। এই দিনার রাতে মানুষ এই দিনটাকে সবচাইতে পবিত্র রাত মনে করে। এই রাতে সারারাত ধরে বিশ্বের সকল মুসলিমগণ আল্লাহ পাকের কাছে ইবাদতে মশগুল থাকে। এই রাতে আল্লাহ পাক মুসলিমদের জন্য তার দরজা খুলে দেন। মানুষ মনেপ্রাণে খাজ দিলে আল্লাহ পাকের কাছে যা চাওয়ার চাইতে থাকে। কবুল করার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
শবে বরাত এককথায় মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। রমজান মাস শুরুর ১৫ দিন আগে শবেবরাতের রাত্র ঘোষিত হয়েছে। অর্থাৎ শবে বরাতের রাত্রি পালনের মাধ্যমে মানুষের মনে রমজানের আমেজ জাগে। তো শবে বরাত পালানোর পরপরই মানুষ রমজানের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। অর্থাৎ রমজান মাসে মানুষ আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকার মাধ্যমে যাতে সঠিকভাবে পালন করতে পারে সেই প্রস্তুতি শবে বরাতের রাত পালনের মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকে।
শবে বরাত শব্দের মানে কি?
ফারসি শব্দ সবে অর্থ রাত আর বরাত অর্থ সৌভাগ্য।
আরবিতে একে বলা হয় লাইলাতুল বরাত। অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত।
শবে বরাতে মানুষের কার্যক্রম
এই রাত্রি সকল মুসলিম নর ও নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে মানুষ আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। এই রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের জন্য অপেক্ষা করেন। যদি কোন বান্দা তার অতীত খারাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন। মানুষ আল্লাহর কাছে খারাপ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। সকল মানুষ যেন এই রাতে কুরআন তেলাওয়াত করে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে, ইবাদাতে থাকে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে পূর্ব খারাপ কৃতকর্মের জন্য। মানুষ ভবিষ্যতে ভালোভাবে চলার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এই রাতে মুসলিমগণ তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং পূর্বপুরুষদের জন্য মঙ্গল কামনা করেন। সকল মুসলিমরা একযোগে মসজিদে ইবাদাতে মশগুল থাকেন। নারীরা তাদের নিজস্ব বাসায় ইবাদত করে থাকেন।
শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজন
এই রাত উপলক্ষে মানুষ দুপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন আইটেমের খাবারের আয়োজন করে থাকেন। পায়েস, ফিন্নি, জর্দা, রুটি, বিভিন্ন নাস্তা পানীয় মানুষ ঘরোয়া ভাবে তৈরি করে থাকেন। এগুলা তৈরি করে মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং গরিবর দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। অনেকে এই দিনে রোজা রেখে থাকেন। মানুষ চুপি চুপি গরিব-দুখীদের মাঝে দান খয়রাত করে থাকেন। এই সময় মানুষ তাদের আশেপাশের অসহায় মানুষদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন এবং অসহায়দেরকে নিজের সমর্থ্য অনুযায়ী হেল্প করার চেষ্টা করেন। রাতে মানুষ কবরস্থানে, মসজিদে এবং মাজারে গিয়ে নিজের পূর্বপুরুষদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আল্লাহর কাছে।
কোথায় কোথায় দিনটি পালন করা হয়
ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনার সাথে সকল মুসলিম দেশে এই দিনটি পালন করা হয়। গোটা দক্ষিণের মধ্যে এশিয়া জুড়ে সকল মুসলিমরা এই দিনটি একযোগে পালন করে থাকেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত সৌদিয আরব সহ অন্যান্য সকল মুসলিম রাষ্ট্রে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। আরব দেশে কেবলমাত্র সুফি ঐতিহ্যের শিয়া ও মুসলিমরা এই দিনটি পালন করে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে এই দিনটিকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের শবে বরাত বা নিফসু সাবান, ইরান ও আফগানিস্তানে নিফ সাবান ও তুরস্কে বিরাট কান্দিলি বলা হয়ে থাকে।
শেষ কথা:
তো প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আশা করছি শবে বরাত সম্পর্কে আপনারা অনেকটাই ধারণা পেয়েছেন। এই দিনটি সম্পর্কে আরো জানতে হলে আপনারা কোরআন মাজীদ, হাদিস শরীফ ও বিভিন্ন ইসলামিক বই ঘাটাঘাটি করে দেখতে পারেন। তাছাড়া আপনারা এই বিষয়ে আলেমদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
আরো জানুন