যাকাত কি | যাকাতের হিসাব | যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব, "যাকাত কি যাকাতের অর্থ কি যাকাতের হিসাব যাকাতের অর্থ ও তাৎপর্য। "
যাকাতের অর্থ কি
যাকাত একটি আরবী শব্দ। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, শুদ্ধি ও বৃদ্ধি।
যাকাত কি
যাকাত হচ্ছে মুসলিমের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে স্তম। যাকাত দেওয়া খুবই বাধ্যতামূলক। যাকাত বলতে বোধহয় শরীয়তের বিধি মোতাবেক আপনার মত সম্পত্তি থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ গরিব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করা। একই যাকাত বলে। এক কথায়, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য নিজস্ব অর্থটাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ গরিব দুঃখীদের মাধ্যমে বিলিয়ে দেওয়া কে যাকাত বলে।
যাকাতের হিসাব
যাকাতের হিসাব আপনি পাঁচ ভাগে করতে পারেন। নিচে পাঁচটি ভাগ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
১/ স্বর্ণ: স্বপ্ন আপনার বাসায় থাকুক অথবা অন্য কারো কাছে আমানত হিসেবে থাকুক অথবা ব্যবসা হিসেবে স্বর্ণ আপনার কাছে থাকুক সুন্দর মালিক যদি আপনি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সেই স্বর্ণের উপর হিসাব করে একটা নির্দিষ্ট অংশ যাকাত দিতে হবে। আপনার মালিকানা যদি স্বর্ণ সাড়ে সাত তোলা বা 87 পয়েন্ট 45 গ্রামের বেশি পরিমাণে থাকে তাহলে সেই স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া আপনার জন্য ফরজ হয়ে গেছে।
২/রুপা: রুপার মালিকানা যদি আপনি হয়ে থাকেন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ যদি একটি অংশ আপনার কাছে থাকে তাহলে আপনাকে সেই রূপকার উপর ভিত্তি করে যাকাত দিতে হবে। সার্কাসের রুপার পরিমাণ যদি সাড়ে 52 তোলা অথবা ৬১২.৩৫ গ্রামের বেশি থাকে তাহলে আপনার ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ হয়েছে।
এক কথায় আপনাকে বলতে পারি, আপনার কাছে যদি স্বর্ণ বা রুপা থাকে তাহলে সে স্বর্ণ বা রুপার 40 ভাগের এক ভাগ অথবা সমপরিমাণ মূল্যের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়া আপনার ওপর ফরজ হয়ে গিয়েছে এবং এই যাকাত দেওয়া আপনার জন্য খুবই বাধ্যতামূলক। না দিলে আপনি গুনাহগার হবেন।
৩/ টাকা: আপনার কাছে যে পরিমান টাকা থাকবে সেটা অবশ্যই হালাল হতে হবে। কারণ হারাম টাকা কখনো যাকাত হবে না। বরং যার সাথে চিটারি বাটপারি করে হারাম টাকা কামিয়েছেন আপনার উচিত হবে হারাম টাকা সেই প্রাপ্য ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দাও। তো আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তাহলে এই টাকা আপনার কাছে দুই ভাবে থাকতে পারে এবং সেই টাকার উপর ভিত্তি করে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। যেমন: নিজের কাছে থাকা টাকা এবং অন্যের কাছে আমানত রাখা টাকা।
#ব্যাংকে জমানোর টাকা বৈদেশিক মুদ্রা হলে আপনার সেই টাকার উপর ভিত্তি করে যাকাত দিতে হবে।
#কর্জ টাকা যেকোনো সময় ফেরত পেতে পারেন তার ওপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া ফরজ।
#ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে যদি টাকা জমানো হয় যেমন ঘরবাড়ি তৈরি খারাপ বিয়েশাদী করা অথবা অন্য কোন কারণে তাহলে সেই টাকার উপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া ফরজ।
#যেকোনো ধরনের ফেরত টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। যেমন অ্যাডভান্স সিকিউরিটি টাকা, জামানত রাখার টাকা। এগুলো আপনি যেকোনো সময় ফেরত পাবেন, তাই এগুলার উপর যাকাত দেওয়া ফরজ।
#আপনার যদি বাড়ি গাড়ি দোকান থেকে থাকে সেগুলো যদি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মাসে ভাড়া পান, তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া ফরজ।
#ব্যাংক বা বীমায় সঞ্চয় বা মুনাফা লাভের জন্য টাকা জমা রাখলে তার ওপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া ফরজ।
৪/গবাদি পশু বা চতুষ্পদ জন্তু: যদি আপনার 5 টিউট ৩০ টি গরু চল্লিশটি ছাগল থাকে তাহলে সেগুলোর উপর ভিত্তি করে যাকাত দিতে হবে। আর সেগুলো যদি সংখ্যা কম হয়ে থাকে তাহলে আপনার ক্যাশ টাকার উপর ভিত্তি করে যাকাত দিতে হবে।
৫/ব্যবসায়িক সম্পদ:
#ব্যবসায়িক সম্পদের উপর ভিত্তি করে যাকাত দেওয়া আপনার জন্য ফরজ হয়ে গেছে।
#কোম্পানির শেয়ার মূল্য
অফুরন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ভাড়া বাসা ভাড়া দোকান ভাড়া কর্মচারীর বেতন বিদ্যুৎ বিল, বাকিতে কয়কৃত পণ্য, দেনার টাকা ইত্যাদি বাতিল করার যে পরিমাণ অর্থ থাকবে সেই অর্থের ওপর ভিত্তি করে যাকাত দিতে হবে।
যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের পবিত্রতা রক্ষা পায়। যাকাত দিলে সম্পদ কমে না বরং সৃষ্টিকর্তার রহমতে সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ সম্পদের উপর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। যাকাত প্রদান এর মাধ্যমে ধনী, গরিবের বৈষম্য দূর হয়। যাকাতের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণ করা সম্ভব। তাইতো আল্লাহ পাক কোরআন মাজীদের বিভিন্ন সূরায় নামাজ পড়ার পাশাপাশি যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো।" কাজে নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে যে সৃষ্টিকর্তাকে রাজি ও খুশি করানোর জন্য নামাজের পাশাপাশি যাকাত অবশ্যই দিতে হবে। যাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পত্তিতে গরিবদের হক।
আরো জানতে ক্লিক করুন:
লাইলাতুল কদর কি লাইলাতুল কদরে কি কি দোয়া পড়তে হয়
ইসলামের যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ পাক যাকাত দেওয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন। প্রত্যেকটা অর্থবান ব্যক্তির জন্যই যাকাত দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে যাকাত দিলে সওয়াব আরো বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। কারণ এ সময় যদি এক টাকা দান করা হয় তার সওয়াব আল্লাহপাক 70 গুণ বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি করে দেন। কাজেই রমজান মাসে সকল ব্যক্তির জন্য যাকাত দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ধনীরা মনে করতে পারে যে তারা গরীবদেরকে দান অথবা অনুগ্রহ করছে। আসলে যাকাত দেওয়া ধনীদের দান বা অনুগ্রহ নয়। বরং আল্লাহপাক বলেছেন "তাদের সম্পদে(ধনীদের) অবশ্যই গরিব-দুঃখীদের হক রয়েছে।" অর্থাৎ ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে। ধনীরা যদি কোন গরিব বা অসহায় ব্যক্তিকে যাকাত দেয় তাহলে বিষয়টা হলো যে, গরিবদের হক তারা(ধনীরা) আদায় করতেছে।
তাই সম্পদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এবং আল্লাহ পাককে রাজি খুশি করার জন্য অবশ্যই প্রত্যেকটা মুসলিম ভাই ও বোনকে যাকাত প্রদান করিতে হইবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী। যাকাতের মাধ্যমেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে এবং মুসলমানদের মধ্যে ভাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করবে। যাকাত ছাড়া তো কখনো আল্লাহ পাককে সন্তুষ্টি করা যাবে না। যাকাতের মাধ্যমে এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে যা দান করবে আল্লাহপাক বিনিময়ে খুশি হয়ে তাকেও কিছু না কিছু দান করবেন। জাহান্নামের আগুন থেকে এবং গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই যাকাত প্রদান করিতে হইবে। আমরা আমাদের সাধ্যমত যাকাত প্রদান করিব এবং অপর মুসলিম ভাইকে প্রদানে উৎসাহিত করি। এতে করে আরেক মুসলমান ভাইয়ের উপকার হবে এবং আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে। তখন সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে একটা ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হবে। কোন মুসলিম কি আর অর্ধাহারে অনাহারে না খেয়ে থাকতে হবে না। প্রত্যেক মুসলিম জাতি জীবনে ভালোভাবে চলতে, ফিরতে ও খাইতে পারবে। এত করে সবার মুখে হাসি ফুটবে।
শেষ কথা:
আমাদের আজকের আর্টিকেলের উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা খুব সহজে যাকাত কি, যাকাতের হিসাব এবং যাকাতের অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কারো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আজকে এ পর্যন্তই। নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে আবার আপনাদের সামনে উপস্থিত হব। সবার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।
আরো পড়ুন: