লাইলাতুল কদর কি | লাইলাতুল কদরে কি কি দোয়া পড়তে হয়
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন? আশা করছি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি।
আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব, "লাইলাতুল কদর কি, লাইলাতুল কদর কবে হয় এবং লাইলাতুল কদরে আপনারা কি কি দোয়া করবেন"। এর সাথে আরো আলোচনা করব এই রাতে আপনারা কি নামাজ পড়বেন এবং কিভাবে পড়বেন, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও মোনাজাত ইত্যাদি সম্পর্কে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাই। আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
লাইলাতুল কদর কে শবে কদর বলা হয় অর্থাৎ লাইলাতুল কদর যেই কথা শবে কদর একই কথা। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর একটি মহিমান্বিত রাত। এই রাতটি অত্যন্ত বরকতম ও ফজিলতপূর্ণ রজনী। শবে কদরের রাতকে এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়। অর্থাৎ শবে কদরের ইবাদত করা হাজার মাসের এবাদত করার চাইতে অনেক বেশি। ১ হাজার মাস হল ৮৩ বছর চার মাস। অর্থাৎ শবে কদরের রাত হচ্ছে ৮৩ বছর চার মাসের চাইতে অনেক উত্তম একটি রাত। এই রাত মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। প্রতি রমজানের সময় রমজান মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে শবে কদর পালন করা হয়। এই রাতে মুসলমানরা এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে রাত কাটান।
আমাদের ইসলাম ধর্মে উল্লেখ করা আছে, এ রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তো অবশ্যই আপনারা বুঝতে পেরেছেন এই রাতের গুরুত্ব কতটা বেশি এবং মুসলিমদের জীবনে কতটা অপরিসীম।
শবে কদর বা লাইলাতুল বরাত কি
শবে কদর কথাটি হচ্ছে ফারসি শব্দ। সবা মানে রাত বা রজনী এবং কদর অর্থ হল সম্মান, মর্যাদা ভাগ্য, সম্ভাবনা, গুনগান ইত্যাদি। এক কথা শবে কদর অর্থ হল মর্যাদার রাত বা ভাগ্য রজনী। এই রাতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন যদি মুসলিমরা সেইভাবে ইবাদত করে আল্লাহর কাছে কিছু চায়।
লাইলাতুল কদর কখন হয়
অনেকে মনে করে থাকেন রমজান মাসের ২৬ টার সময় দিবাগত দিন গিয়ে রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। আসলে এটা কতটুকু সঠিক? বিষয়টা হচ্ছে রমজান মাসের বিশটা রোজা যাওয়ার পর তারপর পরবর্তী দশটা বা নয়টা রোজা হোক, বিশটা রোজার পর থেকে প্রত্যেকটা রোজার বেজোড় রাতে শবে বরাত হতে পারে বলে ধরা হয়। কিন্তু সবাই অনুমান করে ২৬ টা রোজার সময় দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করে থাকেন।
এক কথায় ২০ রমজানের পরে যে কোন বিজোড় রাত লাইলাতুল বরাত হতে পারে। কিন্তু ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত রয়েছে। শবে কদরের এই রাতে পবিত্র কোরআন মাজীদ অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে একটি সূরা পর্যন্ত নাযিল হয়েছে। সুরাটির নাম হচ্ছে "আল কদর"। এই রাত বেশি ঠাণ্ডাও হয় না, বেশি গরমও হয় না, বরং তা হয় উজ্জ্বল।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দিনটি কখন তা আমার মনে নাই।
"তবে এ রাত হলো রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি রাত। এ রাত হলো মুক্ত ও উজ্জ্বল, যা ঠাণ্ডাও না গরমও না।"
........(বর্ণনায় তিরমিযী)
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন:
(إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣ )
বাংলা অর্থ: "নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী"।
.........[ সূরা আদ-দুখান:৩]
আল্লাহ পাক এই রাত সম্পর্কে আরো বলেন:
(فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ )
বাংলা অর্থ: "সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।"
........ [ সূরা আদ-দুখান:৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"যে ব্যক্তি ছাওয়াবপ্রাপ্তির দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় লাইলাতুল কদর ইবাদতের মাধ্যমে কাটাইলো, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হলো।"
........(বর্ণনায় ইবনে খুযায়মাহ)
শবে কদরে কি কি দোয়া পড়তে হয়
শবে কদরে পড়ার জন্য অনেক ধরনের দোয়া রয়েছে। এই রাতে দোয়া পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ পাক দোয়া গুলো খুব তাড়াতাড়ি কবুল করে নেন। তাই আল্লাহপাকের আনুগত্য লাভের জন্য আমরা অবশ্যই নিচের দোয়াগুলা করতে থাকব:
উপরের দোয়াগুলা যত বেশি করে পাঠ করবো আল্লাহপাক তত আমাদের প্রতি খুশি হবেন এবং তিনি আমাদের মনের নেক আশা গুলো পূর্ণ করে দিবেন। এছাড়াও এমন ছয়টি দোয়া আছে যেগুলা আপনি করতে কখনোই ভুলবেন না। এই দোয়াগুলো অবশ্যই আপনি পড়বেন। নিচে দোয়া গুলো উল্লেখ করা হলো।
আরো জানুন:
হিংসা বিদ্বেষ থেকে মুক্তির দোয়া
আল্লাহপাকের আনুগত্য লাভের জন্য অবশ্যই আপনাকে রাতে হিংসা বিদ্বেষ থেকে মুক্তি জন্য দোয়া করতে হবে। কারণ আপনার মনে যদি হিংসা বিদ্বেষ থাকে তাহলে আল্লাহ পাক কখনোই আপনার দোয়াগুলো কবুল করবেন না। কাজেই এই দোয়া অবশ্যই আপনি পড়বেন।
শিরক থেকে মুক্তির দোয়া
আল্লাহর কাছে ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে শিরক থেকে মুক্ত থাকা। শিরক বলতে বোঝায় আপনি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে সমতুল্য হিসেবে মেনে নিলেন। কিন্তু এটা অসম্ভব। আল্লাহর সমতুল্য কখনো কেউ নেই এবং কখনো কোনদিন হবেও না। সুতরাং আল্লাহ পাকের আনুগত্য লাভের জন্য অবশ্যই আপনাকে শিরক থেকে দূরে থাকতে হবে এবং শিরক থেকে দূরে থাকার জন্য নিচের দোয়াটি পড়তে হবে:
রমজান পূর্ববর্তী বিশেষ দোয়া
রমজানের দুই মাস পরবেই মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সাহাবীদেরকে একটি দোয়া বেশি বেশি করে করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সে দোয়াটি আমরা লাইলাতুল বরাতে অবশ্যই পরবো। নিচে দোয়াটি দেওয়া হল:
মা-বাবা সহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া
হিংসুক কখনো অপরের জন্য দোয়া করতে পারেন। দোয়া করতে হলে অবশ্যই আপনাকে হিংসা দূর করতে হবে। দোয়ার নিয়ম হলো আপনার মা-বাবা সহ সকল মুসলিম ভাইয়ের বোনের জন্য দোয়া করবেন। তাই অবশ্যই নিচে দেওয়াটি আপনারা পড়বেন:
ঋণ দুশ্চিন্তা ভয় ও দমন পীড়ণ থেকে মুক্তির দোয়া:
অনেকে আছেন ঋণে জর্জরিত, কেউ আছেন দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন, কারো মনে বিভিন্ন ভয়-ভীতি আছে, কারো সাথে অন্য কেউ জুলুম করতেছে অথবা খারাপ আচরণ করেই যাচ্ছে। তো আপনি এসব থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই নিচের দোয়াটি করবেন:
আল্লাহর আনুগত্য লাভের জন্য দোয়া:
লাইলাতুল কদর আল্লাহর আনুগত্য লাভ ার রাত। এই রাতে আল্লাহর আনুগত্য লাভ করা অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহর আনুগত্য লাভ করতে পারলেই আপনার জীবন সার্থক। তো আল্লাহর আনুগত্য লাভের জন্য অবশ্যই নিচের দোয়াটি করবেন:
লাইলাতুল কদরের নামাজ
লাইলাতুল কদরের নামাজের কোন নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নাই। অর্থাৎ ১০ রাকাত পড়তে হবে অথবা ২০ রাকাত পড়তে হবে এমন কোন নিয়ম নাই। আপনি চাইলে ১০ রাকাত পড়তে পারেন আবার আপনি চাইলে ১০০ রাকাতও পড়তে পারেন। আপনি চাইলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি করে নামাজ আদায় করতে পারেন। আপনি চাইলে দুই রাকাত করে পর্যায়ক্রমে যতটুকু রাগাত পর্যন্ত পারেন নামাজ পড়তে পারেন। নামাজ যত সহীহ, শুদ্ধ ভাবে পড়া যায় এবং আস্তে ধীরে পড়া যায় তা আপনার জন্য ভালো। নামাজে অবশ্যই শুদ্ধতা আপনাকে রক্ষা করতে হবে। আর আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি সারা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়েছেন সাক্ষাৎ করার জন্য। অর্থাৎ নামাজ কি বলা হয় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা। তোমার সৃষ্টিকর্তার সাথে যখন সাক্ষাৎ করবেন অর্থাৎ নামাজ আদায় করবেন তখন আপনাকে কখনো তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করা যাবে না।
অনেকের মুখে প্রচলিত আছে নামাজে নাকি নির্দিষ্ট করে সূরা পড়তে হয়। তো এটা একটি ভুল ধারণা। নামাজ পড়তে গেলে নির্দিষ্ট কোন সূরা নাই। আপনি যে কোন সূরা পড়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে পারবেন।
নামাজ আদায় করার শুরুতে নিয়ত করে নিবেন। নিয়ত নিয়েত তো উল্লেখ করা হলো। আরবিতে নিয়ত না পারলে বাংলায় নিয়ত করবেন। এতে আপনার নামাজ কখনো ভুল হবেনা।
কোরআন তেলাওয়াত করা:
এই রাতে আপনি চাইলে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। কোরআন হচ্ছে মহান আল্লাহতালার পবিত্র বাণী। আপনি যত বেশি করে কোরআন পাঠ করবেন তত বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবেন। কোরআন পাঠে আপনি অসংখ্য সওয়াব ও নেকি হাসিল করতে পারবেন।
কোন বান্দা যদি কোরআন পাঠ করে তাহলে আল্লাহ পাক খুবই খুশি হন। কোরআন পাঠ করা কিন্তু অনেক বড় একটি এবাদত। তাই এই রাতে বেশি বেশি করে কোরআন পাঠ করার চেষ্টা করবেন। কোরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহ আপা খুব সহজেই ইনশাআল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করে নেবেন।
জিকির করা
এই রাতে আপনি যত বেশি করে জিকির করতে পারবেন তত আপনার জন্যই ভালো। জিকির করলে আল্লাহ পাক খুবই খুশি হন।
উপরের জিকের গুলোর কোন বাধ্যবাধকতা নাই। আপনি চাইলে ১০০ বার পড়তে পারেন অথবা তার চাইতে বেশিও পড়তে পারেন। যত বেশি পরিমাণে পড়তে পারবেন ততই আপনার জন্য ভালো। ততোই আপনি আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন। তাই অবশ্যই এই রাতটিতে সব সময় জেকের মশগুল থাকার চেষ্টা করবেন এবং বেশি বেশি করে জিকির করার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও এ রাতে, মৃত কবরবাসীর জন্য দোয়া করবেন পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করবেন নিজের ভাই বোনের জন্য দোয়া করবেন বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবেন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশের জন্য দোয়া করবেন এবং সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য অবশ্যই দোয়া করবেন। এই রাতে পাড়া-প্রতিবেশীর অবশ্যই খোঁজখবর নিবেন। গরিব অসহায় মানুষের বিপদে আপদে সুখে-দুখে এগিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করবেন। দেখবেন এই রাতে আপনি আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন।
শেষ কথা:
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা খুব সহজেই জানতে পেরেছেন লাইলাতুল বরাত কি লাইলাতুল বরাত কখন হয় এবং লাইলাতুল বরাতের কিভাবে দোয়া করতে হয়। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি তারা আপনার কিছুটা হলে উপকার হয়েছে। আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে লাইক করবেন এবং আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারাও লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে জানতে পারে। আর আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে ছোট্ট করে একটি মন্তব্য করবেন। আমরা খুব শিগ্রই আপনার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। এতক্ষণে আমাদের সাথে সময় দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের ইসলামিক নিত্য নতুন খবরাখবর জানতে সর্বদা আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোন আর্টিকেলে। সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
আরো জানুন:
দারাজে কিভাবে এফিলিয়েট একাউন্ট করে মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা আয় করবেন
Helpful😍💞
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন