লায়লাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত?

লায়লাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন? আশা করছি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। আজকে নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে গেলাম।

লায়লাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত?

 আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব লাইলাতুল কদর কি, এই লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত, লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায়ের নিয়ম কি? চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাই। আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

লাইলাতুল কদর কি

লাইলাতুল কদর একটি আরবি শব্দ। আরবি উর্দু ফার্সি এবং হিন্দি ভাষায় একে শবে বরাত বলা হয়।

লাইলাতুল শব্দের অর্থ হচ্ছে রজনী। আর কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে সম্মান। এক কথায় লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে সম্মানিত রাত বা রজনী।

এই রাতে আল্লাহ পাক মুমিন বান্দাদের সম্মান বৃদ্ধি করে দেন।

অন্যভাবে বলা যায়, লাইলাতুল অর্থ হচ্ছে ভাগ্য এবং কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত। 

তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো?

বিষয়টা দাঁড়ালো যে, লাইলাতুল কদর শব্দের পুরা অর্থ হচ্ছে ভাগ্য নির্ধারক রজনী বা রাত। এ রাত কে ভাগ্য নির্ধারকের রাত বলা হয়। অর্থাৎ এ রাতে আল্লাহ পাক মুসলিমদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটান। মুসলিমরা যদি ঈমানের সহিত পরিষ্কার নিয়েতে ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতে আল্লাহ পাকের কাছে কিছু চান, তাহলে আল্লাহ পাক মোমিনদের মনের আশা পূর্ণ করে দেন। 

এই রাতের ইবাদত হাজার রাত্রির ইবাদতের চাইতে উত্তম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইওয়া সাল্লাম বলেছেন,"তোমরা রমজান মাসের শেষের ১০ দিনের বিজয়ের রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। কারণ, এই রাতের ইবাদাত হাজার রাতের ইবাদাতের চাইতে উত্তম। কারণ এই রাতে পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে।"

পবিত্র কালামে বলা হয়েছে,"মহান আল্লাহ পাক এই রাতে মুমিনদের জন্য আগামী এক বছরের হিসেবে রুজি, মৃত্যু ও ঘটনা ঘটনার কথা লিখেন।"

তাহলে এখান থেকে বোঝা যায়, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা কত বেশি, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের মুসলিমদের জীবনের জন্য কি পরিমাণে দামি।


লাইলাতুল কদর কখন হয়

মহানবী সাঃ বলেছেন তোমরা রমজান মাসের শেষের ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের রাত অনুসন্ধান করো। বিশেষ করে তোমরা ২৫, ২৭ এবং ২৯ রোজার রাত্রিতে এই রাতটি অনুসন্ধান করে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তো বিজ্ঞ আলেমদের মতে এই রাত্রি 26 রোজা দিবাগত রাতে হওয়ার সম্ভাবনায় সবচাইতে বেশি। কারণ এই রাতে মুসলিমদের জন্য পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। তাই এই রাত থেকেই সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কদরের রাত্রি হিসেবে আন্দাজ করে লাইলাতুল কদর এর রাত পালন করে থাকেন। অর্থাৎ এ রাতে মুসলিমরা সারা রাত ভরে এবাদতে মশগুল থাকেন এবং আল্লাহর কাছে সবার মনের কথাগুলো বলতে থাকেন এবং খাঁটি নিয়তে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকেন।


আরো জানতে ক্লিক করুন:

মাথাব্যথা কি ও মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা কি


লায়লাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত

অনেকের মনেই নানান ধরনের প্রশ্ন থাকে। যেমন লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত ও কি কি এবং কিভাবে পড়তে হয়?

তো আজকে সেই বিষয়গুলা নিচে উল্লেখ করা হলো:

আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন থাকতে পারে লাইলাতুল কদরের নামাজ আপনারা কত রাকাত পড়বেন। 

মূলত লাইলাতুল কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নাই। আপনার যতটুকু সামর্থ্যে কুলায় ততটুকু পর্যন্ত পড়বেন। আপনি চাইলে দুই রাকাত পড়তে পারেন, চাইলে ১০ রাকাত পড়তে পারেন, চাইলে ১০০ রাকাত পড়তে পারেন অথবা আপনি চাইলে আরো বেশি পরিমাণে পড়তে পারেন। যত বেশি পড়তে পারেন ততো আপনার জন্য ভালো। আপনার সওয়াব বেশি হবে। 


প্রতি নামাজে কত রাকাত সুন্নত

শবে কদরের নামাজ কোন সুন্নত নাই। আপনি দুই রাকাত করে নামাজ পড়বেন। এই নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ। এক কথায় শবে কদরের নামাজ বলতে নফল নামাজ হিসেবে বুঝে নিবেন।


তো এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে শবে কদরের নামাজ কত রাকাত করে পড়বেন?

আসলে শবে কদরের নামাজ দুই রাকাত করে পড়া খুবই উত্তম। আপনি প্রতিবারে দুই রাকাত করে যত খুশি নামাজ পড়তে পারেন। তবে নামাজ যত ধীরে,সুস্থে এবং সূরা গুলো শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে পড়া যায় ততো আপনার জন্য ভালো এবং নামাজ আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। 


লাইলাতুল কদরে নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই অজু করে পাক পবিত্র হয়ে নামাজের জন্য দাঁড়াতে হবে। এরপর নিয়ত করে নামাজ শুরু করবেন। এই নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সূরা নাই। আপনি যে কোন সূরা দিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। সুরাগুলো ধীরে, সুস্থে এবং আস্তে আস্তে পড়তে হবে। আপনারা কোরআনের যে কোন আয়াত তেলাওয়াত করার মাধ্যমে এই নামাজ সুসম্পন্ন করতে পারেন। 


লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত:

আপনারা চাইলে লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত করে নামাজ পড়তে পারেন।

তাছাড়া আপনি যখন লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে অযু করেন, তখন আপনার মনের মধ্যে অটো ভাবে নিয়ত হয়ে যায়। তারপরেও আপনারা যখন নামাজ শুরু করবেন তখন যদি আবার শব্দ করে নিয়েত করতে চান তাহলে করতে পারেন। তো আপনারা চাইলে আরবিতে নিয়ত করতে পারেন। যারা আরবি জানেন না, তারা বাংলাতে নিয়ত করলেই হবে। নিচের ছবিতে আরবি এবং বাংলা সহ নিয়েত উল্লেখ করা হলো:



লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম:

১/আপনি প্রথমে ওযু করে নিবেন সঠিকভাবে

২/এরপর নামাজের জন্য মসজিদে অথবা আপনার বাসার জায়নামাজে দাঁড়াবেন।

৩/এরপর নামাজের জন্য নিয়ত করবেন। চাইলে আরবিতে নিয়ত করতে পারবেন। আরাবীতে না পারলে বাংলায় নিয়ত করবেন।

৪/তারপর আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত করবেন।

৫/সানা পড়ে সূরা এখলাস এবং যেকোনো সূরা পড়ে নিবেন।

৬/তারপর রুকু করে রুকুতে তিন মাস সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়বেন।

৭/এরপর সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়ে আবার আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় চলে যাবেন।

৮/সেজদায় তিনবার করে সুবাহানা রাব্বিয়াল আলা পরে আবার আল্লাহু আকবার বলে উঠে বসবেন। এরপর রব্বিগ ফিরি পড়ে আবার আল্লাহু আকবার বলে সেজদা আগের মতো দিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা তিনবার পরে আবার আল্লাহু আকবার বলে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবেন।

৯/তারপর প্রথম রাকাতের মতই দ্বিতীয় রাকাত সুসম্পন্ন করে বসবেন।

১০/বসার মধ্যে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন।

১১/এরপর আপনি জিকির করা শুরু করবেন।

১২/অথবা জিকির না করে আপনি মোনাজাত ধরতে পারেন।

১৩/এভাবে আপনার দুই রাকাত নামাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেল। 

১৪/এই একই নিয়মে আপনি চাইলে চার রাকাত, দশ রাকাত, ২০ রাকাত, ১০০ টাকা বা তার চাইতে বেশি পরিমাণে নামাজ আপনি পড়তে পারবেন আপনার মন মত।


মুসলমানরা কিভাবে নামাজ পড়ে

একজন প্রকৃত মুসলিম সহিহ এবং শুদ্ধভাবে নামাজ পড়ে।

সে সঠিকভাবে ওযু করবে। এরপর ওযু সেরে নিয়ত করে নামাজে দাঁড়াবে। তারপর নামাজের মধ্যে সুরা গুলা সঠিকভাবে পড়বে। নামাজের মধ্যে কখনো অন্য কোন চিন্তাভাবনা আনা যাবে না। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনি সৃষ্টিকর্তার সম্মুখীন এ সাক্ষাৎ করার জন্য দাড়াইছেন, যে সৃষ্টিকর্তা তাকে সৃষ্টি করেছে এবং সারা বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। 

কাজেই শেষ নামাজের মধ্যে সব সময় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ রাখবে এবং সৃষ্টিকর্তার চিন্তা মাথায় নাড়াচাড়া করতে করতে নামাজ পড়বে। নামাজের মধ্যে প্রত্যেকটা সূরা সঠিকভাবে সূরা পড়ার মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করবে। তারপর বসে একটু জিকির করবে। এরপর আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে মোনাজাত করবে।

তো এভাবে আপনারা খুব সহজেই লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেষ কথা:

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা লাইলাতুল কদর কি, লাইলাতুল কদর কখন হয়, লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত, লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে আদায় করবেন, কিভাবে নিয়ত করবেন, এই সম্পর্কে জানতে পারলেন। আশা করছি আর্টিকেলটি দ্বারা আপনার কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে। আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি কিছুটা হলেও ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন যাতে আপনার বন্ধুরাও লাইলাতুল কদরের নামাজ সম্পর্কে জানতে পারে। আর আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে মন্তব্য জানিয়ে যাবেন। আমরা খুব শীঘ্রই আপনার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। এই ধরনের ইসলামিক খবরাখবর সব সময় পেতে হলে প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন।

এতক্ষণে আমাদের ওয়েবসাইটে সময় দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এই পর্যন্তই রইল। ফিরে আসবো নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।


আরো পড়ুন:

টেলিটক সিমের নাম্বার দেখার উপায়









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন