রোজা ভঙ্গের কারণ | Roja Vonger Karon

 রোজা ভঙ্গের কারণ | Roja Vonger Karon

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন। আশা করছি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিকস নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করছি আজকের টপিকস টি সবাই পড়বেন। আজকের আর্টিকেলটির শুধুমাত্র যারা মুসলিম ভাই ও বোন আছেন তাদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। আজকে টফিকসটি টি হলো রোজা ভঙ্গের কারণ নিয়ে। যেহেতু রমজান মাস এখন, তো সকল মুসলিমরাই কম বেশি করে রোজা রেখে থাকেন। রোজাদারকে অবশ্যই রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কি করলে আপনার রোজা ভেঙে যাবে এবং  আপনার রোজা কে রক্ষা করার জন্য সেগুলো থেকে আপনি বিরত থাকতে পারবেন।

রমজান মাস

বছর ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাস একটি পবিত্র মাস ও বরকতময় মাস। এই মাস হল মুক্তির মাস ও হেদায়েতের মাস। সমস্ত মুসলিম জাতি এই মাসে পবিত্র রোজা অর্থাৎ সিয়াম সাধনা করে থাকেন। অনেকে আছেন জানেন না কি কি করলে এই রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। আজকে আমি আপনাদের সাথে রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণগুলো, রোজার কাফফারা বা কাজা, রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাই। আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

রোজা ভঙ্গের কারণ | Roja Vonger Karon

মানব জাতিকে আল্লাহ তা'আলা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোজা রাখার বিধান জারি করেছেন। তিনি রোজাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। একদিকে রোজা রাখতে গিয়ে রোজাদার শারীরিক কোন ক্ষতি যাতে না হয় অন্যদিকে সে রোজা নষ্ট কারী কোন বিষয়ে যেন লিপ্ত না হয়।

রোজা নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

১/ কিছু রোজা বিনষ্টকারী বিষয় রয়েছে যেগুলো সরাসরি শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন সহবাস ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা হায় এবং সিঙ্গা লাগানো। এগুলা করা হলে শরীর এমনিতে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে আল্লাহ পাক এগুলোকে রোজা ভঙ্গের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। যাতে এগুলোর দুর্বলতা  এবং রোজা থাকার শরীর দুর্বল হওয়া মিলিয়ে দুই দুর্বলতা যেন একত্রে মিলিত হয়ে না যায়। এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে রোজাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সে রোজা থাকার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেনা। সুতরাং তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই এদিকে অবশ্যই সকলের খেয়াল রাখতে হবে।

২/কিছু কিছু কারনে রোজার বিনষ্ট হবে যেগুলা শরীরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে। কাজেই কোন ব্যক্তি যদি পানাহার করে থাকে তাহলে সে রোজার বিধান থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলছে। তাই তার রোজা ভেঙ্গে যাবে (মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮)

রোজা বিনষ্টকারি মূল সাতটি বিষয় রয়েছে। যেমন:-

১/ পানাহার,

২/হস্তমৈথুন,

৩/সহবাস,

৪/যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত,

৫/শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা,

৬/ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা,

৭/মহিলাদের হায়েজ ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া।


আরো জানতে ক্লিক করুন:

রোজার নিয়্যাত

রমজানের সময়সূচি ২০২৩ // Romjan Mas 202

এছাড়াও রোজা ভঙ্গের আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১/ধুমপান করা অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোয়া গ্রহণ করা।

২/ মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে।

৩/ রাত্রি হয়েছে বলে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।

৪/ মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়া এবং সুবহে সাদিকের পর পান থেকে যাবে, তো এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।

৫/ কংকর অথবা পাথর অথবা ফলের বিচি গিলে ফেলা।

৬/ জবরদস্তি করে কেউ রোজা ভঙ্গ করলে।

৭/ পুরা রমজান মাসে রোজার নিয়ত না করলে।

৮ ইচ্ছাকৃত ভাবে মুখ ভর্তি করে বমি করলে।

যখন কাজা বা কাফফারা ওয়াজিব:

১/ইচ্ছাকৃতভাবে কোন জিনিস খাওয়া বা পান করা যায় যা সাধারণত খাওয়া বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২/রোজাদার যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয় তাহলে তার ওপর কাজা বা কাফফারা দুটি ওয়াজিব।

৩/ পুরুষ যদি জোর জবরদস্তি করে মহিলার সঙ্গে সঙ্গম করে তাহলে মহিলার উপর শুধু কাজা ওয়াজিব, কাফফারা নয়। পুরুষের উপর কাজা অথবা কাফফারা দুটোই ওয়াজিব।

৪/ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী ভোগ করা।

৫/ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত করার পর পানাহার করলে তার ওপর কাজা, কাফ ফারা খুবই ওয়াজিব।

রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ কি কি:

১/মিথ্যা কথা বলা,

২/মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া,

৩/গীবত বা দোষ চর্চায় লিপ্ত থাকা,

৪/কারো সাথে শত্রুতা রাখা,

৫/পর নারীর প্রতি দৃষ্টি করা,

৬/জুলুম করা,

৭/অশ্লীল কথা বলা ও অশ্লীল কাজ করা,

৮/সিনেমা দেখা,

৯/মিথ্যা কসম করা।

এসব কারনে রোজা ভঙ্গ হয় না, কিন্তু মাকরুহ হয়। অবশ্য সওয়াব কম হবে। কিন্তু আমাদের উচিত সকল প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা।

যেসব বিষয়গুলো রোজা নষ্ট করে না:

১/ চোখে কিংবা কানের ড্রপ দেওয়া, দাঁত তোলা, কোন ক্ষতস্থানে চিকিৎসা নেওয়া অথবা এনিমা ব্যবহার কখনই রোজা ভঙ্গ করবে না।

২/ হাঁপানি রোগের চিকিৎসা কিংবা অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য যিহবার নিচে যেই ট্যাবলেট রাখা হবে সেই ট্যাবলেট থেকে কোন পদার্থ পেটের ভিতরে গেলে রোজা কখনো ভঙ্গ হবে না।

৩/ মেডিকেল টেস্টের জন্য যোনিপথে যদি কিছু ঢোকানো হয় যেমন: সাপোজিটর, লোশন, হাতের আঙ্গুল, কলপোস্কোপ ইত্যাদি, এসব কারণে কিন্তু রোজা ভঙ্গ হবে না।

৪/ স্পেকুলাম বা আই ইউ ডি বা এ জাতীয় কোন মেডিকেল যন্ত্রপাতি জরায়ুর ভিতরে প্রবেশ করালে কখোনোই রোজা ভঙ্গ হবে না।

৫/ গড়গড়া সহ কুলি করা ও চিকিৎসা জনিত কারণে মুখে কোন স্প্রে ব্যবহার করলে সেই স্প্রে যদি গলার ভিতরে চলে আসে এবং সেই ব্যক্তি যদি সেটা গিলে না ফেলে তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৬/ অক্সিজেন এন্ড এ্যানেসথেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস রোজা কখনো ভঙ্গ করবে না। 

৭/ চিকিৎসার জন্য মস্তিষ্কে অথবা স্পাইনাল কর্ডে কোন চিকিৎসা কিংবা কোন ধরনের পদার্থ ঢুকালে রোজা কখনোই ভঙ্গ হবে না।

৮/ কলিজা বা অন্য কোন অঙ্গের নমুনা স্বরূপ কিছু অংশ সংগ্রহ করল রোজা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু একসাথে কোন দ্রবণ গ্রহণ করা যাবে না।

৯/ চামড়া দিয়ে শরীরে কিছু প্রবেশ করলে যেমন মেডিসিন, কেমিক্যাল, মলম, তৈরি, ডাক্তারি প্লাস্টার ইত্যাদিতে কখনো রোজা ভঙ্গ হবে না।

১০/ দাঁতের রুট, ক্যানেল করা, দাঁত ফেলা মেসওয়াক দিয়ে কিংবা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা, যদি এই ধরনের কোন কিছু গলায় চলে যায় এবং রোজাদার ব্যক্তি যদি সেগুলো গিলে না ফেলে তাহলে কখনোই রোজা ভঙ্গ হবে না।

১১/ নারিভুরি পরীক্ষার জন্য কোন সার্জিক্যাল অপারেশনের জন্য পেটের ভেতর মেডিকেল স্ক্রু  প্করবেশ করালেও রোজা ভঙ্গ হবে না। 

শেষ কথা:

তো প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনগণ, আমাদের উপরের আলোচনা থেকে আপনারা আজকে খুব সহজে জানতে পেরেছেন, কখন রোজা মাকরুহ হয়, কখন রোজার কাফফারা দিতে হয়, কখন রোজা কাজা হয়, কখন রোজা ভেঙ্গে যাবে, কখন রোজা ভাঙবে না। এই বিষয়গুলো আপনারা এখন খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন। আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি দ্বারা আপনাদের কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে। আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে দেবেন। এই ধরনের ইসলামিক নিত্য নতুন আরো টিপস এন্ড ট্রিক্স পেতে হলে সব সময় আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। এতক্ষণে আমাদের ওয়েবসাইটে সময় দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এই পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবার ফিরে আসবো নতুন কোন টপিক্স নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন আর আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকবেন। সবার মঙ্গল কামনা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।


1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন