ডায়রিয়া | ডায়রিয়া হলে করণীয় কি | ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত
আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুগণ যারা স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে চান তাদের জন্য নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব- "ডায়রিয়া কি, ডায়রিয়া হলে করণীয় কি, ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত এবং ডায়রিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করবেন ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই আজকের এই আলোচনাটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে যা আপনাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো সময় কাজে দেবে। তো সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আজকের আলোচনায় সবাই মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকবেন। চলুন শুরু করি আমাদের আজকের আলোচনা।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়া হচ্ছে প্রাচীনকালের একটি রোগ। আমাদের দাদা-দাদীদের আমলে এই রোগটি গ্রামে গঞ্জের আনাচে কানাচে প্রচুর মানুষের দেখা দিত। এ রোগের তখন কোন ওষুধ ছিল না। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষ মারা যেত। বর্তমান যুগের ডায়রিয়াতে মানুষ মারা যায় না বললেই চলে। কারণ ডায়রিয়া বর্তমানে একটি সাধারণ রোগ হয়ে গেছে। এই রোগ হলে মানুষ দ্রুত ওষুধ সাবানের মাধ্যমে রোগটি সারিয়ে তুলতে পারে। মানুষের তেমন কোন ক্ষতি হয় না এই রোগের কারণে বর্তমানে।
ডায়রিয়া কি
ডায়রিয়া হলো একটি পরিপাকতন্ত্রের ব্যাধি। আর এটি যেহেতু পানি বাহিত রোগ তাহলে এই রোগটি বর্ষাকালী বেশি পরিমাণে হয় তবে অন্যান্য ঋতুতেও অল্প পরিমানে হলেও দেখা দেয়। ডায়রিয়া রোগকে অন্যভাবে উদরাময় রোগ ও বলা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মমতা ঘর ফলে যে রোগ দেখা দেয় সে রোগকে ডায়রিয়া বলা হয়। বর্তমান যুগে এই রোগটি কমপক্ষে তিন দিন থাকে এরপর অটো ভাবে ভালো হয়ে যায়। যদি ভালো না হয় তিন দিন পরে তাহলে অবশ্যই কিছু ওষুধ সেবন করবেন। ইনশাআল্লাহ তখন ভালো হয়ে যাবে। এ রোগের কারণে পায়খানার সাথে শরীরের প্রচুর পরিমাণে তরল বের হয়ে যাওয়ার কারণে জলশূন্যতা দেখা দেয়। এ রোগের কারণে মলত্যাগ করার সময় রোগের পেটে প্রচার-প্রমাণে ব্যথা হয়। লোকটি সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট ও বাচ্চাদের মধ্যে বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগ দেখা দেয়। শরীরের লবন ও পানিশূন্যতার কারণেই ডায়রিয়ার মত রোগটি হয়ে থাকে।
ডায়রিয়া ইংরেজি
ডায়রিয়ার ইংরেজি হচ্ছে Diarrhoea ।
ডায়রিয়া কত প্রকার
ডায়রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে সেই ভাগ গুলো উল্লেখ করা হলো:
১/ স্বল্প স্থায়ী বা জলের মত,
২/ স্বল্প স্থায়ী ডায়রিয়া যার সাথে রক্ত বের হয়,
৩/ দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।
ডায়রিয়ার কারণ
১/ দূষিত পানি পান করলে রোগটি হয়ে থাকে
২/পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে এই রোগ হয়
৩/পরজীবের সংক্রমণের ফলে
৪/ শরীরে পানির অভাবে এই রোগ হয়
৫/খাবারে এলার্জির কারণে
৬/ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এই রোগ হতে পারে
৭/ পাকস্থলী তো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে
৮/দুর্বল হজম শক্তির কারণে
৯/পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসবাস না করে অর্থাৎ বসবাসের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত না হলে
১০/ ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে
১১/ শিশুদেরকে রোটা ভাইরাস ও নোরা ভাইরাস সংক্রমণ করলে এই রোগ হতে পারে।
১২/ দূষিত খাবার বা পচা বাঁশি খাবার খেলে ডায়রিয়া হয়।
১৩/ ভ্রমণের সময় অথবা কোন জায়গায় গেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে খাবার বা পানীয় সংগ্রহ করলেন ডায়রিয়া হয়।
১৪/ যেকোনো বয়সের লোকেরা অ্যাডেনো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে যার ফলে ডায়রিয়া হয়।
১৫/ ক্যান্সারের এক ধরনের চিকিৎসা রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। এ খারাপের ফলেও ডায়রিয়া হতে পারে
১৬/ একটি নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের প্রতি অনীহা ও ডায়রিয়া ঘটাতে পারে।
ডায়রিয়া ঝুঁকির কারণ
যদিও ডায়রিয়া রোগটি ছোট বড় সকল মানুষের হয়ে থাকে তারপরও ডায়রিয়া কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের একটু অতিরিক্ত পরিমাণই হয়ে থাকে। কোন ধরনের মানুষের হয়ে থাকে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১/ শিশুদের এই রোগটি প্রায় বেশি পরিমাণে হয়,
২/ প্রাক বিদ্যমান চিকিৎসা অবস্থায় মানুষের বেশি পরিমাণে এই রোগটি হয়ে থাকে,
৩/ বৃদ্ধ মানুষদের মধ্যে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ উপরোক্ত ব্যক্তিদের অন্যান্য জটিলতা ওর স্বাস্থ্যগত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি।
ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো কি
ডায়রিয়ার জটিলতা গুলো কি
ডায়রিয়া বড়দের জন্য মারাত্মক রোগ না হলেও ছোটদের জন্য খুবই মারাত্মক। কাজেই ডায়রিয়া হলে খুব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়রিয়া রোগের অনেকগুলো জটিলতা রয়েছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো:
বড়দের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার জটিলতা যেমন দেখা দিবে
১/শরীরে ক্লান্তি চলে আসবে,
২/অত্যধিক তৃষ্ণা লাগবে,
৩/ শুষ্ক ত্বক বা মুখ দেখা দেবে, আবার মুখের ভেতর শুকিয়ে যাবে।
৪/ সামান্য প্রস্রাব হবে বা অনেক সময় প্রস্রাব হবেই না।
৫/ প্রসাবের রং গাড়ো বা হলুদ হবে,
৬/ মাথা ঘুরাবে এবং মাথা ব্যাথা করবে
৭/জ্বর হবে,
৮/পায়খানার রাস্তায় শ্লেষ্মা দেখা দিবে।
ছোটদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া
১/বাচ্চারা কাঁদবে কিন্তু চোখে কোন অশ্রু থাকবে না,
২/ দেহের তাপমাত্রা ১০২° ফারেনহাইট এর বেশি হবে,
৩/ পেট, চোখ ভেতরে ঢুকে যাবে তার সাথে গালও ভিতরে ঢুকে যাবে,
৪/ তিন ঘন্টা সময় অতিক্রম হয়ে যাবে কিন্তু একটিও ডায়াপার ভিজবে না
৫/মুখ শুকনা থাকবে এবং জিব্বা দিয়ে বারবার ঠোঁট চাটবে।
কিভাবে ডায়রিয়া নির্ণয় করা যায়
আপনি রোগের মধ্যে কিছু কার্যক্রম দেখে ডায়রিয়া নির্ণয় করতে পারবেন। আমার পরীক্ষার মাধ্যমেও ডায়রিয়া নির্ণয় করা যায়। নিচে তা উল্লেখ করা হলো:
১/আপনি রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডায়রিয়া নির্ণয় করতে পারবেন,
২/ মল পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডায়রিয়া নির্ণয় করা যায়,
৩/ শ্বাস পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডায়রিয়া নির্ণয় করতে পারবেন
৪/ উপবাস পরীক্ষা করার মাধ্যমে বোঝা যায় খাবারের কোন সমস্যা বা এলার্জির কারণে ডায়রিয়া হয়েছে কিনা,
৫/ ডায়রিয়া নির্ণয় করার জন্য ইমেজিং পরীক্ষাও করা হয়,
৬/ এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করেও ডায়রিয়া নির্ণয় করা যায়।
ডায়রিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
ডায়রিয়া রোগের অনেক প্রতিরোধ রয়েছে। নিচে প্রতিরোধ উল্লেখ করা হলো:
১/সব সময় ভাল রান্না করা খাবার এবং গরম খাবার খেতে হবে,
২/ কাঁচা খাবার সবসময় এড়িয়ে চলবেন,
৩/ খাওয়ার পথ যে খাবার বাকি থাকবে তা ফ্রিজে রেখে দিন,
৪/ঘনঘন আপনার হাত ধুতে হবে,
৫/ চা,পানি,সোডা,চকলেট এসব অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
ডায়রিয়া কিভাবে ঘরোয়াভাবে প্রতিকার করা যায়
ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। যার ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তো এই পানিশূন্যতা পূর্ণ করার জন্য আপনাকে বেশি বেশি করে ও স্যালাইন খেতে হবে। তাহলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হবে। তাছাড়া আপনি আরো খেতে পারেন ডালের জল। পাশাপাশি আপনি পাতলা লিকার চা খেতে পারেন। এতে করে দাঁড়িয়ে আর খাওয়ানোর শরীরের পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ হবে এবং ডায়রিয়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা কি
১/ রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে ডাক্তার রোগীর শিরায় ইনজেকশন নিতে পারেন।
২/ রোগীর ডিহাইড্রেশন অনুভব করলে তাকে আরও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিবেন,
৩/ ডাক্তার রোগীকে সব সময় ওর স্যালাইন পানিতে মিক্সড করে খাওয়ার পরামর্শ দিবেন।
ডায়রিয়ার বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে। এই ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ দিবে ডাক্তার। তাই অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। ডাক্তারের পরামর্শ মত রোগীকে ঔষধ খাওয়াবেন। ইনশাআল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।
ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত
ডালিমের পোশাক শুকিয়ে নিন, এতে মধু মিশিয়ে তিন-চারদিন খেতে পারেন। আবার আপনি যদি না খাওয়ার পানি পান করেন তাহলে আপনার ডায়রিয়া কমাতে ব্যাপক পরিমাণ সহায়তা হবে। ছোট বাচ্চাদেরকে ডায়রিয়া হলে মসুর ডালের পানি খাওয়াতে হবে। সব সময় তো বেশি পরিমাণে ঘুমাতেন এবং মোশার খাবার এড়িয়ে চলবেন। হলুদ বেশি পরিমাণে খাবেন যা আপনার ডায়রিয়া দূর করতে সহায়তা করে। সব সময় খাবারে পুষ্টিকর উপাদান লাগবে। ডায়রিয়া দূরীকরণে আপেল, টোস্ট, কলা ইত্যাদি বেশি পরিমাণে রাখবেন।
শেষ কথা
তো প্রিয় পাঠকগণ, আমাদের আজকের আলোচনা থেকে আপনারা ডায়রিয়া কি, ডায়রিয়া কেন হয়, ডায়রিয়া কিভাবে দূর করবেন, ডায়রিয়া হলে কি খাবেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ডায়রিয়া সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে অবশ্যই আমাদেরকে নক করবেন। আপনার প্রশ্ন লিখে আমাদেরকে কমেন্ট করবেন। আমরা খুব শীঘ্রই উত্তর দেব। আজকে এখানে শেষ করলাম। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
আরো জানতে ক্লিক করুন: