কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত পাঠক বন্ধুগণ আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব কাঠ বাদাম কি , কাঠ বাদাম দেখতে কেমন, কাঠ বাদামের ছবি কোনগুলো, কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা কি, কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক গুলো কি , কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম , কাঠ বাদামের দাম, ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের দাম কত , কাঠবাদাম গাছ কেমন, কাঠবাদাম গাছের দাম ইত্যাদি সম্পর্কে। 

তো বাদাম অনেক ধরনের হয়ে থাকে। সকল বাদাম থেকে আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব কাঠবাদাম নিয়ে। এই কাঠ বাদামের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। বিশ্বের জনপ্রিয় সকল গাছের মধ্যে কাঠ বাদাম অন্যতম। তাইতো কাঠ বাদাম ছোট-বড় বয়স্ক সবারই পছন্দের একটি খাবার।

কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা


কাঠ বাদাম

কাঠ বাদাম হচ্ছে একটি সুস্বাদু খাবার, যার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাঠ বাদাম ভালোবাসে না এমন কোন মানুষ নেই। কাঠ বাদাম হচ্ছে একটি গাছের রসালো ফলের বীজ। এই ফলের অভ্যন্তরে কয়েকটি বীজ থাকে। প্রত্যেকটি বীজ তিন থেকে চার সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা  আকৃতির। বীজগুলো সব সময় পরিপক্ক ফল থেকে বের হয়। এই বীজের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Terminalia catappa।  সারা বিশ্বের মধ্যে এই কাঠ বাদাম ভারতীয় বাদাম নামে পরিচিত। 

কাঠ বাদাম দেখতে কেমন 

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কাঠ বাদাম দেখতে কেমন। তো এখন কাঠ বাদামের কিছু ছবি আমি আপনাদেরকে দেখাবো। আপনারা যারা কাঠ বাদাম না চেনেন বা না দেখেছেন তারা নিচের ছবিগুলো দেখে খুব সহজে বুঝতে পারবেন কাঠ বাদাম দেখতে কেমন। তাছাড়া আপনি কোন দোকানে গিয়ে কাঠ বাদামের খোঁজ করলেই তারা আপনাকে কাঠবাদাম দেবে। তখন আপনি হাতে নিয়েও দেখতে পারবেন কাঠ বাদাম কেমন।

কাঠ বাদামের ছবি

কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা


কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঠ বাদাম | কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঠ বাদামের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। তবে অপকারিতার চাইতে উপকারিতা সবচাইতে বেশি। কাঠ বাদামের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিচে কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

কাঠ বাদামের উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১/ শরীরের ওজন কমাতে কাঠ বাদাম বিকল্প নেই। এই বাদাম শরীরের ওজন কমাতে অসামান্য অবদান রাখে।

২/ আপনার হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে কাঠবাদামের কোন বিকল্প নাই।

৩/ শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখার জন্য কাঠ বাদাম খুবই দরকারি।

৪/ কাঠ বাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৫/ কাঠ বাদাম শরীরের ফুলে যাওয়া ভাব দূর করে।

৬/ কাঠ বাদাম খিদা কমায় ও দীর্ঘক্ষন পেট ভরিয়ে রাখে।

৭/ কাঠ বাদাম শরীরে খাবারের হজম শক্তি বাড়িয়ে থাকে।

৮/ শরীরের জন্য এনজাইম খুবই প্রয়োজনীয়। কাঠ বাদাম এই প্রয়োজনীয় এনজাইম নিঃসরণ হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯/ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠ বাদাম ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা করে থাকে।

১০/ কাঠ বাদাম মাথার ব্রেন ঠিক রাখ।

১১/ গর্ভবতী নারীদের জন্য কাঠ বাদাম খুবই উপকারী। যদি কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়া হয় তাহলে গর্ভবতী নারী এবং সন্তান উভয়ের জন্য উপকার বয়ে আনবে।


কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক

কাঠ বাদাম আমাদের সকলেরই পছন্দের খাবার। কিন্তু এই কাঠ বাদাম খেয়ে আবার আপনার ক্ষতি করছেন না তো? কাঠ বাদাম এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন: 

১/ কাঠ বাদাম যদি পরিমাণ এর চাইতে অধিক পরিমাণে খান তাহলে আপনার শরীরে চর্বি বেড়ে যাবে অর্থাৎ আপনি মোটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যাবে তাই ওজন সঠিক রাখার জন্য অতিরিক্ত হারে কাঠ বাদাম খাওয়া বন্ধ করুন।

২/ অতিরিক্ত হারে কাঠ বাদাম খেলে দেহে টক্সিন জমার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে নার্ভের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট হওয়াসহ আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাহলে অবশ্যই নিজেকে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে হলে অতিরিক্ত হারে কাঠ বাদাম খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

৩/ কাঠ বাদামের মধ্যে ভিটামিন ই রয়েছে। যেমন ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে রয়েছে ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। আমরা এই কার্ড বাদাম যদি আরো তিন গুণ বাড়িয়ে খাই, তাহলে শরীরের তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই বরং মোটামুটি ভালো। কিন্তু ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অনেক শাকসবজি আমরা খেয়ে থাকি। যার ফলে আমাদের ডায়রিয়া সহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। তাই কাঠ বাদামের সাথে অন্যান্য শাকসবজি অথবা অন্যান্য শাক-সবজির সাথে কাঠ বাদামের ভারসাম্য বজায় রেখেই শাক-সবজি বা কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত।

৪/কাঠ বাদামে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার। তো আপনি যদি অধিক পরিমাণে কাঠ বাদাম সেবন করে থাকেন তাহলে ফাইবার অধিক পরিমাণে আপনার শরীরে যাওয়ার কারণে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগ থেকে বাঁচার জন্য কাঠ বাদাম নির্দিষ্ট পরিমাণ এর চাইতে বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। 

৫/ অতিরিক্ত পরিমাণে বাদাম সেবনের ফলে আপনার শরীরে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার আপনার খাদ্যনালীতে জ্বালাপোড়া দেখা দেবে।

৬/ কাঠবাদামে সোডিয়াম এর পরিমাণ কম থাকে। তখন আপনি যদি বাদামের সাথে লবন দিয়ে বাদাম সেবন করেন তাহলে শরীরের সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন এই সোডিয়াম রক্ত প্রবাহ কে উচ্চচাপে পরিণত করে। যার ফলে আপনার শরীরে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেবে।

৫/ সুতরাং দিনে সর্বোচ্চ ৪০ গ্রামের বেশি কাঠ বাদাম কখনই খাবেন না। সর্বোচ্চ ৪০ গ্রাম এবং সর্বনিম্ন পরিমাণে খেলে কাঠ বাদাম আপনার শরীরে শুধুমাত্র উপকার-ই দেবে, কখনো আপনার শরীরের ক্ষতি করবে না।


কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাঠ বাদাম আপনি চাইলে শুকনা খেতে পারবেন অথবা আপনি ভিজিয়ে খেতে পারবেন। দিনে চার থেকে ছয়টি বাদামের বেশি খাওয়া যাবে না। কাঠ বাদাম শুকনা খাওয়ার চাইতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। সকালে অথবা বিকালে খেতে পারলে এর কার্যকারিতা বেশি হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে চারটি কাঠ বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। সেগুলো সারা রাত পানিতে ভিজবে। সকাল বেলা উঠে খোসা ছাড়িয়ে খেয়ে নেবেন। অথবা আপনি সকালবেলা বাদামগুলোকে ভিজিয়ে রাখেন। বিকেলবেলা আপনি পানি থেকে বাদাম গুলো ছেঁকে খেয়ে ফেলবেন।

কাঠ বাদামের দাম

কাঠ বাদামের দাম বাজার ভেদে পার্থক্য হয়। বর্তমানে কাঠ বাদামের মূল্য কেজি হিসেবে ১০০০ টাকা। আগে দাম আরো কম ছিল। কিন্তু দাম পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকে। 

১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের দাম কত

কাঠ বাদামের দামটা একটু বেশি। যেহেতু জিনিস ভালো তাহলে দাম একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রায় সময় কারওয়ান বাজার থেকে কাঠ বাদাম কিনে আনি। কাঠ বাদামের কেজি হচ্ছে ১০০০ টাকা। তো সেই হিসেবে ১০০ গ্রাম কাঠ বানানোর দাম হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা। আবার বাজার দাম কম বা বেশি হতে পারে। দাম কোন সময় একটু বাড়তে পারে, আবার কোন সময় একটু কমতেও পারে। তা আপনি বাজারে গেলে বুঝতে পারবেন। তো ১০০ গ্রাম কাঠ বাদাম যদি আপনি কিনে আনেন আর প্রতিদিন যদি চারটা করে সেবন করেন তাহলে আপনার অনেক দিন চলে যাবে এই ১০০ গ্রাম বাদামে।

কাঠ বাদাম গাছ

কাঠ বাদাম গাছ নিরক্ষীয় ও উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে। এটি অনেক বড়সড়ো বৃক্ষ আকৃতির গাছ। এই গাছ আকারে ৩৫ মিটার পর্যন্ত উচু হয়। গাছটির উপরের দিকে অনুভূমিকভাবে ডালপালা বের হয়। গাছ যত বড় হয় ডালপালাগুলো তত চ্যাপ্টা হয়ে যায় যা দেখতে অনেকটাই ফুলদানির মত। পাতাগুলো দেখতে খুবই বড়। পাতার রং থাকে একদম চকচকে সবুজ। শুষ্ক মৌসুমে পাতা হলুদ বা বাদামী রঙের আকার ধারণ করে ঝরে পড়ে যায়। পরবর্তীতে আবার নতুন করে পাতা গজায়। এরপর গাছে সার দিতে হয় ও নিয়মিত পানি দিতে হয়। চারা গাছ একটি খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। চারা গাছের চারদিকে বেড়া দিতে হবে যাতে গরু ছাগল গাছগুলোকে খেয়ে না ফেলে।

কাঠ বাদাম | কাঠ বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা


কাঠ বাদাম গাছের দাম

কাঠ বাদামের গাছ বিভিন্ন নার্সারিতে আপনি খোঁজ করলেই পাবেন। ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে গাছের চারা পেয়ে যাবেন। আবার গাছের চারা যদি একটু বড় পরিমাণে হয় তাহলে দাম আরেকটু বেশি হতে পারে। স্থান ভেদে চারার দামের পার্থক্য হতে পারে।

কাঠ বাদাম গাছ চাষ পদ্ধতি

কাঠ বাদাম গাছ চাইলে বাংলাদেশে চাষ করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন চাষ হয় না। মানে কেউ চাষ করে না বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশের মাটি হলো কাঠ বাদাম গাছের চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি। কাঠ বাদাম গাছ চাষের জন্য বেলে, দোআঁশ মাটি সবচাইতে উত্তম। প্রথমে চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করতে হয়। জমিতে কোন গাছের আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হয়। এরপর কাঠ বাদাম গাছের চারা বুনতে হয়। চারার আকার অনুযায়ী গর্ত নির্ধারণ করতে হয়। এরপর গাছে সার দিতে হয় ও নিয়মিত পানি দিতে হয়। চারা গাছ একটি খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। চারা গাছের চারদিকে বেড়া দিতে হবে যাতে গরু ছাগল গাছগুলোকে খেয়ে না ফেলে।

শেষ কথা 

তো প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, আপনারা আমাদের আজকের আলোচনা থেকে কাঠ বাদাম কি, কাঠ বাদাম দেখতে কেমন, কাঠ বাদামের দাম , কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম, কাঠ বাদাম গাছের দাম, কাঠবাদাম চাষ পদ্ধতি সহ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আপনাদের আরো কিছু জানার প্রয়োজন হলে আমাদেরকে নক করবেন। আমরা সেই অনুযায়ী আর্টিকেল আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করার মাধ্যমে বিদায় নিচ্ছি। আবার পরবর্তীতে দেখা হবে। সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

আরো জানুন:

ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথাব্যথা দূর করার উপায়


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন