গ্রাফিক্স ডিজাইন কি | গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব
আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুগণ আপনারা যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা জেনে খুশি হবেন, আজকে আমি আপনাদের সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা করব। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব গ্রাফিক্স ডিজাইন কি, গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার, গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কি কি লাগে, গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখবেন ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই আপনারা মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়বেন। তাহলে আপনারা গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা অর্জন করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কোনো বিকল্প নাই। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং করতে গেলে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর প্রয়োজন পড়ে যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যানার ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন, ফ্লায়ার ডিজাইন সহ সকল ডিজাইন এর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন জানা আবশ্যক। তাহলে বুঝতেই পারছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন না থাকলে পুরো ডিজিটাল মার্কেটিংই অচল।
তো আপনি যদি চিন্তা ভাবনা করে থাকেন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন তাহলে কিন্তু আপনি চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারলেই আপনি এটের মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। জীবনে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখলেই আপনি লোকাল মার্কেটে অনলাইনে বিদেশী মার্কেটপ্লেস গুলোতে নিশ্চিন্তায় কাজ করতে পারবেন। আপনি চাইলে বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির চাকরি করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে। অর্থাৎ সেসব বিদেশী কোম্পানিগুলোর যত কাজের প্রয়োজন হয় সব কাজ আপনাকে অনলাইনে দিয়ে দিবে এবং আপনি অনলাইনে করে মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইবার আপ ওয়ার্ক ট্রুল্যান্সার, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি মার্কেটপ্লেস গুলোর মাধ্যমে তাদের কাছে জমা দিতে পারবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন জানা থাকলে আপনার জন্য চাকরি বা ইনকামের কোন কমতি থাকবে না।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি
গ্রাফিক্স ডিজাইন হল কোন একটি তথ্য বা ডকুমেন্টস কে বা মেসেজ কে নিজের মনের মতো করে মনের মাধুরী মিশিয়ে রং, তুলি, রেখা, দিয়ে মানুষের কাছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা।
গ্রাফিক্স ডিজাইন অত্যন্ত চমৎকার জনপ্রিয় হয়ে আছে মার্কেটগুলোতে। গ্রাফিক্স ডিজাইন জানা থাকলে যে কোন সেক্টরের কাজ পাওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টর এর কাজগুলো গ্রাফিক্স ডিজাইনের আওতায় পড়ে। গার্মেন্টসের প্রচুর কাজ গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে করতে হয়। এই কারণেই তো গ্রাফিক্স ডিজাইন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রাফিক ডিজাইনে আপনি যদি এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোন দেশে ভালো একটি স্যালারিতে চাকরি পাবেন। তাছাড়া আপনি ফ্রিল্যান্সিং করেও লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনার এই কাজ জানা থাকলে আপনি বিভিন্ন আইটি সেক্টর গুলোতে চাকরি পাবেন সর্বোচ্চ স্যালারিতে।গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স করে যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও আপনি ভালো স্যালারিতে জব করতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি অনলাইনে একাধিক স্টুডেন্টদেরকে সাথে নিয়ে ক্লাস করাতে পারেন। এতে আপনি ভাল পরিমানে ইনকাম করতে পারবেন। অনেকেই আছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ অনেক মজবুতভাবে শিখে অনলাইনে স্টুডেন্টদেরকে ক্লাস করায়। তারা প্রতি মাসে হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে এভাবে অনলাইনে ক্লাশ করানোর মাধ্যমে।
আবার কেউ কেউ আছেন গ্রাফিক ডিজাইন রিলেটেড টিউটোরিয়াল তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করেন গ্রাফিক্সের স্টুডেন্টদের কাছে। এভাবেও কিন্তু ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন হচ্ছে। টিউটোরিয়াল তৈরি করার জন্য আপনাকে একবার সময় দিতে হবে। এরপর সেগুলার ভিডিও ডিভিডিতে লোড করে এমন বহু ডিভিডি বানাতে পারবেন। তোর সেই ডিভিডি গুলো স্টুডেন্টদের কাছে বিক্রয় করে দিবেন। আর এভাবে প্রতিনিয়ত বিক্রি করবেন এবং প্রতিনিয়ত আপনার ইনকাম হতে থাকবে। আপনাকে বারবার টিউটোরিয়াল তৈরি করতে হবে না। শুধু একবার কষ্ট করে টিউটোরিয়াল ভিডিও বানাতে পারলে আপনি আজীবন বসে বসে ইনকাম করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার
অনেকেই আছেন যারা গ্রাফিক ডিজাইন করে থাকেন কিন্তু গ্রাফিক্স ডিজাইনার প্রকারভেদ জানেন না। আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা গ্রাফিক্স ডিজাইন এর প্রকারভেদে জানতে পারবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিভিন্ন কাজ রয়েছে। সবগুলা কাজকে ভাগ ভাগ করে নয় প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে। নিচে গ্রাফিক্স ডিজাইনের নয় প্রকার কাজের নাম উল্লেখ করা হলো:
১/ গেমিং ডিজাইন,
২/ লোগো ও ব্যান্ডিং ডিজাইন,
৩/ ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড ডিজাইন,
৪/ ভিজুয়াল ডিজাইন,
৫/আর্কিটেকচার ও বিল্ডিং ডিজাইন,
৬/ প্রোডাক্ট ও চ্যারেক্টারস ডিজাইন,
৭/ ফ্যাশন এন্ড মার্সেন্ডাইজ,
৮/ ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট ও
৯/ আর্ট এন্ড ইলাস্ট্রেশন ।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কি কি লাগবে
গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে গেলে আপনার ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ থাকা লাগবে। অনেকে মনে করতে পারে মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন করবে। আসলে যেটা শেখার জন্য যেই ডিভাইসটি উপযুক্ত সেটি কিন্তু লাগবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য মোবাইল কিন্তু উপযুক্ত নয় এটা অবশ্যই আপনাকে বুঝতে হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ লাগবে। আর অবশ্যই আপনার নেট কানেকশন থাকা লাগবে। কারণ কাজ করতে গিয়ে আপনি অনেক জায়গায় বাধার সম্মুখীন হবেন। তখন সেই বিষয়গুলোর সমাধান আপনি গুগল অথবা ইউটিউবে পেয়ে যাবেন। গুগল বা ইউটিউবে যেতে হলে আপনার অবশ্যই নেট কানেকশন থাকা লাগবে। আপনারা ওয়াইফাই নিয়ে নিবেন অথবা সিম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এক কথায় ইন্টারনেট ব্যতীত গুগল বা ইউটিউবে আপনি কখনোই প্রবেশ করতে পারবেন না।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি ভাবে শিখব
যেহেতু আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে আগ্রহী তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার বিষয়ে আপনার অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে আপনি কি কি উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার কয়েক ধরনের উপায় রয়েছে। আপনার যদি এই উপায় গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন আপনার কোন উপায়টি অবলম্বন করলে আপনি খুব দ্রুত গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায় গুলো সম্পর্কে।
১/টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে:
বর্তমানে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর টিউটোরিয়াল বিক্রি করা হচ্ছে। আপনি চাইলে প্রফেশনালদের কাছ থেকে টিউটোরিয়াল কিনে সে টিউটোরিয়াল বাসায় দেখে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন। অবশ্য সেই টিউটোরিয়াল গুলোর মান কেমন তা আপনাকে আগে থেকেই ধারণা নিতে হবে। সেজন্য প্রফেশনালদেরকে নক করে প্রথমে তাদের কাছ থেকে চার পাঁচটি ভিডিও নিয়ে দেখে ভিডিওর মান বুঝতে হবে যে, ভিডিওগুলো কতটুকু ভালো পরিমাণে তৈরি করা হয়েছে। এই ভিডিও গুলা দেখে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা যাবে কিনা তা অবশ্যই বুঝে নিতে হবে অগ্রিমভাবে। যদি আপনার কাছে এই চার/পাঁচটা টিউটোরিয়াল দেখে মনে হয়, এই কোর্সটা ভালো হবে তাহলে আপনি খুব সহজে তাদের কাছ থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের টিউটোরিয়াল কোর্স কিনতে পারেন।
২/অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে:
অনেক শিক্ষকরা আছেন খুব এক্সপার্ট। তো তারা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করিয়ে থাকেন। আপনি চাইলে তাদের অনলাইন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। অনলাইনে ক্লাস করার একটা সুবিধা আছে। এখানে একজন শিক্ষকের আয়ত্তে প্রায় ২০ থেকে ৫০ জনের মতো স্টুডেন্টস থাকে। শিক্ষক যখন ক্লাস করাবে তখন যদি আপনাদের কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনারা সবাই শিক্ষককে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন এবং শিক্ষক সরাসরি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবে। তাতে করে আপনার সমস্যা তৈরি হওয়ার সাথে সাথে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাচ্ছে। আপনারা জুম অ্যাপ্লিকেশন অথবা গুগল মিট এপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে মোবাইল দিয়ে ক্লাশ করতে পারেন। আবার ঝুম বা google এর মাধ্যমে আপনারা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ দিয়েও ক্লাস করতে পারেন।
৩/সরাসরি ক্লাস করে:
সরাসরি ক্লাস করে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন। তো এখন প্রশ্ন হল, ক্লাস আপনি করবেন কোথায়। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গ্রাফিক্সের অনেকগুলো ট্রেইনিং আইটি সেন্টার রয়েছে। তাছাড়া সরকারিভাবেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আপনি চাইলে সরকারি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অথবা আপনি প্রাইভেট আইটি সেক্টর গুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এতে করে আপনি শিক্ষকদের সাথে সরাসরি ক্লাশ করতে পারবেন। এরপর সে ক্লাসগুলার প্র্যাকটিস বাসায় এসে করবেন। প্র্যাকটিস করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যায় পড়েন, সেগুলো খাতায় নোট করে রাখবেন। পরবর্তীতে যখন ক্লাশ করতে যাবেন তখন আপনার খাতার নোট শিক্ষকদেরকে দেখাবেন। ফলে তারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করে দিবেন। এভাবে একটা কোর্সের সময়কাল থাকে দুই মাস বা তিন মাস। এই দুই মাস বা তিন মাসে আপনি পুরো গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স কমপ্লিট করতে পারলে আপনি বহু কিছু শিখতে পারবেন। তো ক্লাস তো করানো হয় দুই ঘন্টা বা এক ঘন্টা। কিন্তু আপনি বাসায় এসে প্র্যাকটিস করলেন না, তাহলে আপনাকে ক্লাসে যা করানো হয়েছে সবকিছুই আপনি ভুলে যাবেন। তাই অবশ্যই আপনাকে ক্লাসের পরে বাসায় এসে প্র্যাকটিসও করা লাগবে। এই প্র্যাকটিসের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
শেষ কথা
আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা খুব সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইন কি, গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার, গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কি কি লাগে, গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখবেন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেছেন। গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে আরো কিছু জানার প্রয়োজন হলে আপনারা কমেন্ট করুন। আমরা আপনাদের সামনে তা উপস্থাপন করব। আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করলাম। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।