বেতন মওকুফের জন্য আবেদন
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় বন্ধুগণ, আজকে আমি আপনাদের সাথে বেতন মওকুফের আবেদন নিয়ে আলোচনা করব। আমি আপনাদেরকে আজকে খুবই সহজে জানিয়ে দিব আপনারা কিভাবে বেতন মওকুফ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বেতন মওকুফ
অনেকেই আছেন যারা স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না। তো আপনাদের বেতন যাতে মওকুফ হয়, সেজন্য অবশ্যই আপনাকে দরখাস্ত বা আবেদন করতে হবে। এই বেতন মওকুফের জন্য দরখাস্ত করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। সবকিছু মেনে আপনাকে বেতন মওকুফের জন্য দরখাস্ত লিখতে হবে।
অনেকেই আছেন যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না, কিন্তু স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যতটুকু খরচ বা বেতন তারা পরিশোধ করা সম্পূর্ণভাবে তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এই মুহূর্তে যদি আপনাদের বেতন মওকুফ করা হয়, তাহলে আপনারা সমস্যাটি সম্পূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন।
আবার কেউ কেউ আছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা কালীন সময়ে আর্থিক সংকটে পড়ে যান। প্রথমে তাদের কোন আর্থিক সংকট হয় না। নির্দিষ্ট বেতনের মাধ্যমে ঠিকই পড়াশোনা চালিয়ে যান। কিন্তু মাঝপথে হয়ত তাদের ফ্যামিলির আর্থিক সংকট হতে পারে। তখন তারা ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করতে পারেন না। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে।
আমার এখন সিনিয়র ভাই দেখেছি যাদের ফ্যামিলির আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত স্বচ্ছল ছিল। একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ত সেই ভাই। প্রতিনিয়ত ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করত আর প্রতি দুই মাস পর পর সেমিস্টার ফি পরিশোধ করত। যাহোক, সুন্দরভাবে চলতেছিল দিনকাল। সেই ভাই পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিলো। হঠাৎ করে তার বাবার ব্যবসা বাণিজ্যে লোকসান হওয়ার কারণে তাদের ফ্যামিলিগতভাবে বড় ধরনের আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। এই মুহূর্তে সেটার নেতিবাচক প্রভাব সেই ভাইয়ের পড়াশোনার উপরে পড়ে। ভাই তখন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। কারণটা হলো ঠিকঠাকভাবে সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারছে না। সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে না পারলে ক্লাস করা বন্ধ। আর পরীক্ষা তো দিতে দেওয়া হবেই না। কারণ পরীক্ষা দিতে হলে এডমিট কার্ড নিতে হবে। এডমিট কার্ড নিতে হলে বেতন পরিশোধ করতে হবে। সুতরাং বেতন নাই, সেই কারণে এডমিট কার্ড নাই। তো পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ।
তো এমত অবস্থায় তিনি বেতন করার জন্য ইউনিভার্সিটির ভিসি মহোদয়ের কাছে দরখাস্ত করতে বাধ্য হন।
আবেদন কত প্রকার ও কি কি
বেতন মওকুফের জন্য আবেদন
আবেদন আপনি চাইলে আবেদন আপনার নিজের হাতে লিখতে পারেন অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে লিখে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। হাতে লিখলে লেখা অত সুন্দর হয় না, আবার কারো কারো হাতের লেখা বুঝতে একটু কষ্ট হয়। আর কম্পিউটারের মাধ্যমে লিখলে লেখা একেবারে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় এবং বুঝতে কোন কষ্ট হয় না।
এই কারণে হাতে লেখা আবেদনের চাইতে কম্পিউটারে লেখা আবেদন সবচেয়ে উত্তম। তবে হাতে লিখলেও কোন সমস্যা নেই। হাতে লেখা দরখাস্ত জমা দিলে "কেউ বলবে না, কেন হাতে লিখেছেন"। আপনার মন চাইলে আপনি হাতে লিখেও আবেদন জমা দিতে পারেন।
স্কুল বেতন মওকুফের জন্য আবেদন
আপনি প্রথমে একটি a4 সাইজের এর কাগজ নিবেন। কাগজের বাম পাশে এবং উপরের পাশে এক স্কেল বরাবর একটি মার্জিন টানবেন। এরপর কাগজের উপরের বাম পাশ থেকে লেখা শুরু করবেন। প্রথমে তারিখ দিবেন। এরপর লেখবেন বরাবর। তারপর লিখবেন "প্রধান শিক্ষক"। যেহেতু আপনি স্কুলে দরখাস্ত লিখছেন স্কুলের প্রধান হিসেবে থাকেন প্রধান শিক্ষক।
এরপর আপনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দিবেন। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন জায়গায় অবস্থিত সেই এড্রেসটি দিবেন। তারপর লেখবেন বিষয়। লেখার পরে বিষয়ের সামনে দিয়ে আপনি কেন আবেদন লিখতেছেন সেটি লিখবেন। যেমন আপনি বেতন মওকুফের জন্য আবেদন করতেছেন, তাহলে লিখে দিবেন "বিষয়- বেতন মওকুফের জন্য আবেদন"। এরপর জনাব লিখে কমা দিয়ে, এর নিচ থেকে লেখা শুরু করবেন।
লিখবেন "যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্র। ইদানিং আমাদের আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে আমাদের পরিবার ব্যাপক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমার বাকি ছোট দুই বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাথে আমার স্কুলের বেতন পরিশোধ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে আমার স্কুলের বেতন মওকুফ করাটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে অন্যথায় স্কুলে পড়াশোনা করা আমার পক্ষে কোনমতেই সম্ভব হচ্ছে না।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন এই যে উপরোক্ত আলোচনা বিবেচনাপূর্বক আমার স্কুলের উক্ত বেতন মওকুফ করতে আপনার একান্ত মর্জি হয়।
কলেজের বেতন মওকুফের জন্য আবেদন
আপনি যদি কলেজে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি কলেজের বেতন মওকুফের জন্য আবেদন করবেন। শুধু অযথা মওকুফের জন্য আবেদন করলে হবে না। আপনার আর্থিক সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে কিন্তু আবেদন করতে হবে। কারণ যদি কলেজের অধ্যক্ষ প্রমান পায়, আপনার কোন আর্থিক সমস্যা নাই, তাহলে কিন্তু আবেদন কোন মতেই মঞ্জুর করবেন না।
দরখাস্তের নিয়ম কিন্তু একই। দরখাস্ত স্কুলে পড়লে প্রধান শিক্ষকের নামে হতো। আর কলেজে পড়লে হবে বরাবর, নিচে হবে "অধ্যক্ষ"। কারণ কলেজের প্রধান থাকেন অধ্যক্ষ মহোদয়।
এরপর সব কিছু একই রকম হবে। পরিবর্তন হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। তারপর আবেদনের শেষে নিচে দিয়ে দিয়ে দিবেন নিবেদক, আপনার নাম, আপনার আইডি নং এবং আপনার ডিপার্টমেন্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন মওকুফের জন্য আবেদন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েও যদি আপনি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সেখানেও আপনার বেতন মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের নিয়ম কিন্তু একই হবে। শুধুমাত্র আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা আপনার রোল বা আইডি নং, যার বরাবরে লিখবেন তার পদবী এগুলাই পরিবর্তন হবে। বাকি সবকিছুই একইভাবে হবে।
এখানে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, আপনি কি কারণে বেতন মওকুফ করতে চাচ্ছেন তা হয়তো পরিবর্তন হতে পারে। আপনার ফ্যামিলি কি কারনে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা বিভিন্ন ফ্যামিলির বিভিন্ন রকম কারণ হতে পারে। আপনার কারণ যেটা আপনি সেটা আবেদনের মধ্যে উল্লেখ করে দেবেন।