অ্যাসাইনমেন্ট | অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়মí

 অ্যাসাইনমেন্ট | অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকগণ, আজকে আমি আপনাদের সাথে অ্যাসাইনমেন্ট কি ও অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আমার আজকের আলোচনায় যদি আপনারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যদি থাকেন, তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে আপনাদের আর কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি। আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনারা খুব সহজে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন এবং আপনারা নিজেরাই নিজেদের অ্যাসাইনমেন্ট খুব সুন্দরভাবে, আকর্ষণীয়ভাবে এবং অত্যন্ত মার্জিতভাবে লিখতে পারবেন। 

অ্যাসাইনমেন্ট | অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম

অ্যাসাইনমেন্ট কি

অ্যাসাইনমেন্ট হলো একটি বাড়ির কাজ। যাকে ইংরেজিতে হোমওয়ার্ক (HOME WORK) বলেও উল্লেখিত করা হয়। যখন আপনি স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন তখন শিক্ষকরা ক্লাসের মধ্যে আপনাকে পড়াশোনা করায় এবং সেই পড়াশোনা সম্পর্কিত কিছু কাজকর্ম বাসায় করার জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। তো আপনি শিক্ষকদের কথামতো সেই কাজগুলো খাতায় লিখে অথবা অন্য কোনভাবে বাড়িতে করে পরবর্তী সময় ক্লাসে জমা দেন। এগুলাই হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। 

Assignment এর কাজ কি

আপনাকে ক্লাসে শিক্ষক ভালোভাবে পড়াশোনা বুঝিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আপনার থেকে কিছু আউটপুট পাওয়ার জন্য, সেই পড়াশোনা সম্পর্কিত কাজ বাড়িতে করার জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। আপনাকে বাড়িতে যা কাজ দেওয়া হয়েছে, তাই করতে হবে। এটাই হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ। অ্যাসাইনমেন্ট করা প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম সঠিকভাবে পালন করার জন্য আপনাকে অ্যাসাইনমেন্ট করতেই হবে। নতুবা আপনি পরীক্ষার সর্বমোট ফলাফলে ভালো নাম্বার উত্তোলন করতে পারবেন না। আপনার সর্বমোট পরীক্ষার নাম্বার থেকে কিছু নাম্বার এই অ্যাসাইনমেন্ট এর মধ্যে নির্ধারণ করা থাকে। আপনি অ্যাসাইনমেন্ট যত ভালো করে করতে পারবেন আপনাকে নাম্বার তত ভালো পরিমাণে দেওয়া হবে। এতে করে পরীক্ষায় নাম্বারের দিক দিয়ে আপনি অনেকের থেকে এগিয়ে থাকবেন। আবার পরীক্ষার জন্য আপনার যেই প্রিপারেশন নেওয়া দরকার অ্যাসাইনমেন্ট করার মাধ্যমে আপনার কিন্তু সেই প্রিপারেশন নেওয়া হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আপনার সেই পুরাতন পড়াশোনা গুলো আবার নতুন করে আয়ত্ত করা হচ্ছে যা আপনাকে পরীক্ষার হলে আবার নতুন করে কাজে দেবে। 

অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশ্য

ছাত্র জীবনের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট খুবই দরকার। কারণ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে একজন ছাত্র সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা অর্জন করতে পারে। অসাইনমেন্ট যদি আপনি ঠিকঠাকভাবে করতে পারেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি পড়াশোনায় অনেকটাই দক্ষ এবং পরীক্ষায় আপনার ভালো রেজাল্ট করা সম্ভবনা রয়েছে। যখন শিক্ষকরা ক্লাস করান, আপনি তখন বুঝতে পারেন আপনি সেই পড়াশোনা সম্পর্কে ভালো ধারণা অর্জন করেছেন। কিন্তু সেই পড়াশোনা যদি আপনি হাতে কলমে করতে যান তখনই আপনি বুঝতে পারেন আপনার বিভিন্ন জায়গায় বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে আপনাকে যা বুঝিয়ে দেয়, যা পাঠদান করায়, তা সম্পর্কিত কাজ আপনাকে বাসায় করতে বলা হয়। আপনি যদি শিক্ষকদের কাছ থেকে সবই বুঝে থাকেন তাহলে আপনি সেই কাজগুলো বাসায় সঠিকভাবে করে পরবর্তী সময়ে ক্লাসে জমা দিতে পারবেন। আর যদি আপনি বাসায় সেই কাজগুলো অর্থাৎ অ্যাসাইনমেন্ট করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোন কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে বা কোন কোন জায়গায় পড়াশোনা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। তো এখানে আপনি নিজেকে পরখ করার একটু সুযোগ পাচ্ছেন, আপনি কতটুকু বুঝেন বা পারেন। পরবর্তী ক্লাসে আপনি সেই সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধান করে নিতে পারবেন। বাসায় থেকে আপনার বন্ধুদের কাছে ফোন করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, শিক্ষকদের কাছে ফোনের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবেন। আবার পরবর্তী সময় ক্লাসে গিয়ে আপনি সমস্যাগুলোর সমাধান করে নিতে পারবেন। এতে করে আপনি পড়াশোনায় আস্তে আস্তে খুবই দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং আপনার ভুলগুলো আস্তে আস্তে সংশোধন হয়ে যাবে।


অ্যাসাইনমেন্ট | অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম

অ্যাসাইনমেন্টের কভার পেজ

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার জন্য প্রথমে একটি কভার নিতে হবে। কভার পেজ আপনি যে কোন লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন অথবা কম্পিউটারের দোকান থেকেও সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আপনি যেই স্কুল, কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন সেই প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্পর্কিত নানান ধরনের কভার পেজ, আপনি কম্পিউটারের দোকানে পাবেন। কারণ এগুলা তারা তৈরি করে প্রিন্ট করে রাখেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।

কভার পেজে আপনার প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকবে আর প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকবে, প্রতিষ্ঠানের ছবিও থাকবে।

কভার পেজের প্রথমে থাকবে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। তারপর আপনার অ্যাসাইনমেন্টের নাম, সাবজেক্টের নাম, সাবজেক্টের কোড উল্লেখ করা থাকবে।

তারপর আপনার নাম, আপনার আইডি নং, আপনার ডিপার্টমেন্ট, আপনার জিমেইল, আপনার ফোন নাম্বার ইত্যাদি উল্লেখ করা থাকবে বাম পাশে। ডান পাশে উল্লেখ করা থাকবে কোন শিক্ষকের কাছে জমা দিবেন, সেই শিক্ষকের নাম, শিক্ষকের পদবী, শিক্ষকের ফোন নাম্বার ইত্যাদি। এরপর সর্বশেষে অবশ্যই জমা দানের তারিখ উল্লেখ করা থাকবে। আপনি যেদিন জমা দিবেন সেই তারিখটি সেখানে বসিয়ে দেবেন

তো এই লেখাগুলো আপনি চাইলে কালো কালারের বলপেন দিয়ে আপনার নিজের হাতে লিখতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে কম্পিউটারে লিখিয়ে প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারেন। সবচাইতে সুন্দর হয় কম্পিউটারে যদি লিখে প্রিন্ট করিয়ে নেন।

Assignment কিভাবে তৈরি করতে হয়

একটি এসাইনমেন্ট যখন আপনি তৈরি করবেন অবশ্যই সেটা যতটা ভালো করা যায় এবং সুন্দর করা যায়, ততই আপনার জন্য মঙ্গলজনক। কারণ এতে করেই আপনি শিক্ষকদের মনে ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবেন এবং পরীক্ষায় আপনার নাম্বারের পরিমাণটা বেশি হবে। অ্যাসাইনমেন্ট যদি আপনি সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে করতে না পারেন, তাহলে সেটা কখনো অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে গণ্য হবে না। 

কভার পেজ নিবেন A4 সাইজের। কভার পেজের পরই অ্যাসাইনমেন্ট লেখার জন্য অবশ্যই A4 সাইজের-ই কাগজ নিতে হবে। কাগজের বাম পাশে এবং উপরের পাশে মার্জিন টেনে নিতে হবে এক স্কেল বরাবর। তারপর কাগজের বাম অংশ থেকে লেখা শুরু করবেন।

লেখায় কোন কাটা ছেঁড়া থাকা যাবে না। যতটুকু সম্ভব কাটাছেড়া না করাই ভালো। লেখাগুলো সব সময় ছোট ছোট বাক্যে বিভক্ত থাকতে হবে। লেখায় কোন জটিল শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। লেখা অত্যন্ত সুন্দরভাবে করে হাতের লেখা সুন্দর করে লিখতে হবে। একটানা লিখে শেষ করলে চলবে না। অবশ্যই একাধিক পেরায় বিভক্ত করে লিখতে হবে। 

ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু কপি করে হুবহু লিখলে হবে না। নেট থেকে আপনি ধারণা নিতে পারেন। কিন্তু সেটা আপনাকে অবশ্যই নিজের ভাষায় লিখতে হবে। লেখা শেষ হয়ে গেলে সর্বশেষে অবশ্যই উপসংহার যোগ করতে হবে।

তারপর সবগুলা কাগজকে একটার পর এক করে সিরিয়াল অনুসারে সাজিয়ে পিন মেরে নিতে হবে। প্রথমে থাকবে কভার পেজ, তারপরে থাকবে ভূমিকার অংশ, এরপরে আপনার মূল বক্তব্য থাকবে, সিরিয়াল অনুযায়ী মূল বক্তব্যের কাগজগুলো একটার পর আর একটা করে যুক্ত হবে। এরপর উপসংহারের কাগজটা যুক্ত হবে। তারপর স্টাপলার মেশিনের পিনের সাহায্যে আটকে বইয়ের মত করে জমা দিতে হবে।

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম

আসাইনমেন্ট লেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিয়মকানুন অনুসরণ করে লিখতে হবে। আপনাকে প্রথমে কভার পেজ নিয়ে কভার পেজটির মধ্যে আপনার নাম, ঠিকানা, রোল নাম্বারসহ সকল কিছু দিয়ে পূরণ করতে হবে। 

এরপর আপনাকে আপনার অ্যাসাইনমেন্টের ট্রাফিকস এর অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে। আপনাকে কি বিষয়ে লিখতে বলা হয়েছে সেটা অবশ্যই আপনাকে বুঝতে হবে। বুঝেই সেই অনুযায়ী ধারনা মাথায় এনে তারপর আপনাকে লিখতে হবে। 

অ্যাসাইনমেন্টের ভূমিকা 

অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে ভূমিকা লিখতে হবে। প্রথমে আপনি সেই ট্রফিকস সম্পর্কিত ভূমিকা লিখবেন। ভূমিকা আপনি সেই ট্রফিকস রিলেটেড কিছু কথাবার্তা লিখবেন। চার পাঁচ লাইনের কথাবার্তা লিখে আপনাকে মূল কথা শুরু করতে হবে। ভূমিকা লেখার পরপর-ই সেই ট্রফিকস এর সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবেন। 

অ্যাসাইনমেন্ট এর মূল কথা

ভূমিকা লেখা শেষ হলেই আপনি আপনার টপিক্স রিলেটেড মূল কথা শুরু করে দিবেন। কি, কেন কোথায়, কিভাবে- এই প্রশ্নগুলো করলে যা উত্তর পাওয়া যায় সেই উত্তরগুলো একের পর এক করে সাজিয়ে গুছিয়ে, পেরা আকারে, ছোট ছোট বাক্যে, অত্যন্ত মার্জিত ভাবে, হাতের লেখা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে লিখবেন।

অ্যাসাইনমেন্ট এর শেষ কথা

অ্যাসাইনমেন্টের শেষ কথায় আপনাকে অবশ্যই উপসংহার যোগ করতে হবে। উপসংহার যোগ করার মাধ্যমে আপনার এসাইনমেন্ট ১০০% ভাবে পরিপূর্ণ হবে। উপসংহার বলতে বুঝায় আপনি এতক্ষণে যা যা লিখলেন অর্থাৎ আপনার সেই ট্রফিকস সম্পর্কিত অ্যাসাইনমেন্টে শিক্ষনীয় বিষয় কি, তা থেকে আপনি কি বুঝলেন, কী শিখলেন, আমাদেরকে কি করতে হবে আপনার এতক্ষণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে- শুধুমাত্র এই বিষয়ে ৪-৫ লাইন এর কয়েকটি কথা লিখে শেষ করে দেবেন।

শেষ কথা

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আমাদের উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে আপনারা খুব সহজেই অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে প্রশ্ন করবেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। আমরা খুব শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে আরো ধারণা দিয়ে দেব। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন, যাতে সেও অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।


আরো জানুন:

পড়াশোনা | পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায়








একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন