অল্প পড়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার উপায়
আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমি আপনাদের সাথে কথা বলবো অল্প পড়ে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করতে পারবেন।
পরীক্ষাকে অনেকেই ভয় করেন। পরীক্ষা আসলে সবার মনে একটা আতঙ্ক কাজ করে, হতাশা বেড়ে যায়। অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভাবেন জীবনে যদি পরীক্ষা না থাকতো তাহলে কত ভালো হতো। কারণ তখন মাথায় আর কোন টেনশন থাকত না। নিজের মন মত পড়াশোনা করা যেত। কিন্তু পরীক্ষা থাকার কারণে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য বা ভালো রেজাল্ট করার জন্য জান প্রাণ দিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে ছাত্রদের কে এটা কখনোই ছাত্র-ছাত্রীরা চাচ্ছে না।
লাইফে পরীক্ষা থাকার দরকার আছে। পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি পড়াশোনায় কতটুকু এক্সপার্ট। পরীক্ষা ছাড়া কখনই পড়াশোনা সুসম্পন্ন করা সম্ভব না। কারণ পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি এক ক্লাস পার করে আরেক ক্লাসে যাবেন। পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি ডাক্তার হবেন, ইঞ্জিনিয়ার হবেন। পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি যেকোন সরকারি-বেসরকারি চাকরি লাভ করবেন।
অল্প পড়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবেন যেভাবে
অনেকের সারাক্ষণ পড়াশোনা করেন দিনরাত একাকার করে। কিন্তু পরীক্ষার সময় দেখা যায় যে তিনি পরীক্ষার সকল প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারেন না। অবশেষে পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করেন। আবার অনেকেই আছেন যারা অল্প পরিমাণে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেন। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হবে। তা উল্লেখ করা হলো:
১/ নিয়মিত রুটিন করে করা পড়া
অনেকে আছেন ঠিকমতো পড়াশোনা করেন না এবং একটা সময় ভাবেন পরীক্ষার সময় আসলে সবকিছু পড়ে শেষ করে ফেলবেন। আসলে এভাবে কখনো পড়া হয় না। যখন পরীক্ষার সময় আসে তখন আপনার মাথা গরম হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি কোন বই রেখে কোন বই ধরবেন কুল কিনারা পাবেন না। তখন আপনার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ১০০%। তাই আপনাকে অল্প করে হলেও প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। আপনি যদি পরীক্ষায় অল্প করে পড়াশোনা করেন নিয়মিত, পরীক্ষায় একটা ভালো রেজাল্ট অর্জন করার যথেষ্ট পরিমাণ চান্স রয়েছে।
২/ মুখস্ত করা:
সব পড়া বুঝে পড়লে হয় না। কিছু কিছু পড়া অবশ্যই মুখস্ত করে করতে হয়। সেগুলা কবিতার মত করে অথবা গল্পের মত করে মুখস্থ করে নেবেন।
৩/ প্র্যাকটিস করা:
আপনি কোন একটা পড়া মুখস্ত করেছেন। আবার কিছুদিন ধরে সেই পড়াটি না পড়ে আপনি আবার অন্য পড়ার দিকে ধাবিত হলেন। তাহলে কিন্তু আপনি আগের পড়াগুলো ভুলে যাবেন। কাজেই যে কোন পড়াশোনা নিয়মিত প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করবেন।
৪/ অনলাইনে ক্লাস:
অনলাইনে আপনার পড়াশুনা রিলেটেড অনেক ক্লাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির স্বনামধন্য শিক্ষকরা সেই ক্লাস নিয়ে থাকেন। খুব এক্সপার্ট স্টুডেন্টরাও সেই ক্লাস নিয়ে থাকেন। সেসব ক্লাসে জয়েন করে নেবেন। ফলে আপনার পড়াশোনা বোঝা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
৫/ সাজেশন
আপনার পরীক্ষা যখন ঘনিয়ে আসবে তখন আপনাকে একটা সাজেশন দেওয়া হবে। এই সাজেশন সাধারণত প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা দিয়ে থাকেন। পরীক্ষার দুই মাস আগে থেকে যখন শিক্ষকরা সাজেশন দেবেন, তখন সেই সাজেশন অনুযায়ী সাজেশনের পড়াগুলো বেশি করে পড়বেন। তাতে সেখান থেকে কমন পড়লে পরীক্ষার হলে ঝটপট উত্তর দিতে পারবেন। আর সাজেশন এর বাইরের পড়াগুলোও একটু পড়ে যাবেন।
৬/ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রেডি রাখা:
যখন পরীক্ষার রুটিন পেয়ে যাবেন, তখন আপনি পরীক্ষার জন্য আরও এলার্ট হয়ে যাবেন। আপনার গুরুত্বপূর্ণ সকল জিনিস যেমন: কলম, পেন্সিল, রাবার হার্ডবোর্ড, প্রবেশপত্র ইত্যাদি গুছিয়ে রাখবেন। যদি আপনার বাসায় না থাকে তাহলে সেগুলো লাইব্রেরি থেকে কিনে রেডি করে রাখবেন যাতে পরীক্ষার সময় খুব দ্রুত সবকিছু রেডি করে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হওয়া যায়।
ঠিক এই সময়টাতে শরীর ও স্বাস্থ্যের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আপনি কমবেশি পড়াশোনা করেছেন ঠিক আছে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে আপনার সব চেষ্টা বা পড়াশুনা সকল কিছু বৃথা যাবে। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে এই মুহূর্তটাতে আপনি পড়াশোনা করতে পারবেন না এবং পুরাতন পড়াশোনা গুলো রিভিশন দিতে পারবেন না। কিন্তু ঠিকই পরীক্ষার দিন চলে আসবে আপনার নিকটে। ফলে আপনি পরীক্ষার দিনে পরীক্ষা দিতে পারবেন না অথবা পরীক্ষা দিলেও আপনার রেজাল্ট অতটা ভালো হবে না। কাজেই সেদিকে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৮/ ঝামেলা মুক্ত থাকা:
এ সময় আপনাকে সকল ধরনের অন্যায়, অপরাধ থেকে ঝামেলা মুক্ত থাকতে হবে। খারাপ বন্ধুদের মাঝে মেশা যাবে না। কারণ খারাপ বন্ধুরা যে কোন সময় আপনার সাথে অঘটন ঘটাতে পারে। সকল ধরনের মারামারি ও গ্যাঞ্জাম থেকে বিরত থাকতে হবে আপনাকে, যাতে করে আপনার পরীক্ষায় কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
৯/ সময় মত হলে উপস্থিত হওয়া:
পরীক্ষার আধাঘন্টা আগে পরীক্ষার হলে গিয়ে পৌঁছতে হবে। সাথে করে দুই/একটা বই নিয়ে যেতে পারেন। যখন ক্লাস রুমে যাবেন তখন বইটি নিয়ে পড়া শুরু করবেন। মানে আগের পড়াগুলো চোখের নজরে হাত বুলিয়ে যাবেন। তারপর যখন পরীক্ষার হলে যখন শিক্ষক প্রবেশ করবেন, তখন বইটি রেখে দিতে পারেন সামনের টেবিলের উপর।
১০/প্রশ্নপত্র বোঝা:
এরপর যখন প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে পুরো প্রশ্নটা একবার পড়ে নিবেন। প্রশ্নে কি বলছে না বলছে এগুলো একটু ভালো করে পড়বেন এবং মাথায় আর টানার চেষ্টা করবেন যে প্রশ্নতে কিসের উত্তর চাইছে সে উত্তরটি কিভাবে করতে হবে। তো সেই অনুযায়ী লেখা শুরু করবেন।
১১/ অতিরিক্ত কলম ব্যবহার না করা:
অনেকে পরীক্ষার খাতায় বিভিন্ন কালারের কলম ব্যবহার করে থাকেন। যেমন কোন একটি লেখাকে হাইলাইট করতে হলে লেখার নিচে মার্কার প্যান দিয়ে দাগ দিয়ে থাকেন। তো এত কালারের কলম ব্যবহার করার দরকার নাই। শুধু কালো কালার বলপেন এবং পেন্সিল ব্যবহার করবেন।
১২/ বুঝে শুনে উত্তর লেখা:
এরপর বুঝে শুনে লেখা শুরু করবেন। যে প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার কাছে খুবই সহজ এবং পারেন ভালো, সেগুলার উত্তর আগে দেবেন। পরবর্তীতে কঠিন প্রশ্নের উত্তরগুলো দেবেন। কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আপনি সেগুলো কম পারার কারণে সময় চলে যাবে বেশি। পরবর্তীতে সহজ প্রশ্নের উত্তর আপনি দেওয়ার সময় পাবেন না। তাই সহজ প্রশ্নের উত্তর আগে দিয়ে দেবেন। এরপর কঠিন প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করবেন যদিও না পারেন সামনের পিছের কারো কাছ থেকে যদি সুযোগ পান দেখেও লিখে দিতে পারবেন।
১৩/ হাতের লেখা সুন্দর করা:
আপনি আপনার উত্তরপত্রে অবশ্যই হাত লেখা সুন্দর করে লিখবেন। আপনার হাতের লেখা যদি অসুন্দর হয়, তাহলে শিক্ষকগণ আপনার লেখা বুঝবেন না এবং খাতার মধ্যে ভালো নাম্বার দিবেন না। আর শিক্ষকগণ লেখা পড়তে অসন্তুষ্ট হবেন। আর আপনার লেখা যদি স্পষ্ট হয় শিক্ষকরা পড়ে খুবই খুশি হবেন এবং আপনাকে নাম্বার একটু বেশি পরিমাণে দিবেন অন্যদের তুলনায়। কাজেই বুঝতে পারলেন হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার কারণে নাম্বার বেশি পাওয়া যায়।
১৪/ খাতা রিভিশন দেওয়া:
লেখা "পরীক্ষার সময়" শেষ হওয়ার মিনিমাম ৩০ মিনিট পূর্বে শেষ করতে হবে। এই ৩০ মিনিট আপনারা পুরো খাতাটি রিভিশন দিবেন। আপনার কোন জায়গায় কোন ভুল হয়েছে কিনা অথবা কোন ত্রুটি আছে কিনা অথবা কোন প্রশ্নের উত্তর বাদ রেখে গেছেন কিনা এগুলা অবশ্যই চেক করে নেবেন।
শেষ কথা
আমাদের আজকের আলোচনা থেকে আপনারা খুব সহজেই জানতে পারলেন অল্প পড়ে কিভাবে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট অর্জন করা সম্ভব। এ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জানতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে নক করবেন। আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করলাম। সবার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করছি। আসসালামু আলাইকুম।
আরো পড়ুন: