সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার ১৭ টি নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীগণ, আশা করছি আপনারা সকলেই কমবেশি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাই এই মুহূর্তে আপনাদের পড়াশোনার বিষয়ে চমৎকার একটি আর্টিকেল নিয়ে চলে আসছি। আজকে আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার ১৭ টি নিয়ম সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়লে আপনারা খুব সহজেই নিয়ম কানুন মেনে পড়াশোনা করতে পারবেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখতে পারবেন।
সঠিক উপায়ে পড়াশোনা
আপনারা পড়াশোনা অবশ্যই করেন। কিন্তু পড়াশোনা করলে সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করতে হবে। তাহলে আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক পড়া আয়ত্ত করতে পারবেন। সেই পড়া আপনাদের মনে থাকবে বেশি। পরীক্ষার হলে একটার পর এক করে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতে পারবেন। পরীক্ষার খাতায় নাম্বারও পাবেন বেশি। আপনার ক্লাসমেট এবং শিক্ষকদের মনে ভালো ছাত্র হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবেন। অন্তত আপনার স্টুডেন্ট লাইফে আপনার জীবন সাকসেস হবে।
সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার ১৭ টি নিয়ম
আজকে আমি আপনাদের সাথে সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার ১৭ টি নিয়ম সম্পর্কে একের পর এক করে আলোচনা করব। এই ১৭ টি নিয়ম জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিচে নিয়ম গুলো উল্লেখ করা হলো:
১/রুটিন:
আপনাকে সঠিকভাবে পড়াশোনা করতে হলে প্রথমে যেটি প্রয়োজন হবে সেটি হচ্ছে রুটিন। অবশ্যই আপনাকে রুটিন মেনে পড়াশোনা করতে হবে। আপনি যে ক্লাসে পড়াশোনা করেন আগে দেখতে হবে সেই ক্লাসে কয়টি বই আছে। সেই বই অনুযায়ী কোন বই কত ঘন্টা পড়বেন তার একটি নির্দিষ্ট সময় বের করবেন। সে সময় অনুযায়ী রুটিন করে নিবেন কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত কোন বই পড়বেন। এরপর সেই টাইম শেষ হলে আবার কোন বইটি পড়া শুরু করবেন। এভাবে রুটিন অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বই পড়াশোনা করতে থাকলে আপনার পড়াশোনা নিয়মিত হবে এবং আপনি পড়াশোনার দিক দিয়ে সকলের চাইতে এগিয়ে থাকবেন।
২/ধৈর্য্য ধরা
পড়াশোনায় অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আপনার ধৈর্য্য না থাকলে আপনি পড়াশোনা করতে পারবেন না। অনেকের বইয়ের ট্রফিকস খুবই কঠিন। তাই বলে আপনাকে সেই ট্রফিকস ছেড়ে দিলে হবে না। অবশ্যই সেই ট্রফিকস মুখস্ত করা বা বুঝে শুনে করার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি সেই পড়াটি আপনার আয়ত্তে না আসে আপনি যদি হাল ছেড়ে দেন তাহলে কিন্তু হবে না। অবশ্যই বারবার ধৈর্য্য ধরে পড়াশোনা করতে হবে।
৩/ চেষ্টা করা
যখন আপনি একটা পড়া পড়ছেন অথবা একটি অংক করতে করছেন এরপর যদি আপনি বারবার ব্যর্থ হন তাহলে কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে হবে না। আপনাকে বারবার চেষ্টা করতে হবে সেখানে সফল হওয়ার জন্য। অবশ্যই চেষ্টা করতে করতে একটা সময় সেই পড়া বা সেই অংকটি আপনার আয়ত্তে চলে আসবে।
৪/ লেগে থাকা:
মনে করেন একটি অংক করতে বসছেন আপনি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না। তো আপনি কিন্তু সেখানে থেমে থাকতে পারবেন না। অবশ্যই শিক্ষকদেরকে ফোন করে শিক্ষকদের থেকে সহযোগিতা নিয়ে অথবা বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে আপনাকে সেই ট্রফিকস সুসম্পন্ন করতে হবে। এভাবেই সফল না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে লেগে থাকতে হবে সফল হওয়ার জন্য।
৫/ আত্মবিশ্বাস
আপনার মধ্যে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনি অবশ্যই পারবেন যদি চেষ্টা করেন। আপনার দ্বারা সম্ভব এমনটাই আপনি ভাববেন। কারণ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ আল্লাহর নাম নিয়ে চেষ্টা করলে যে কোন কিছুই মানুষের দ্বারা সম্ভব। সফলতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা এবং আত্মবিশ্বাস অবশ্যই আপনার মনের মধ্যে থাকতে হবে। তাহলে আপনি ভালো করতে পারবেন।
৬/ নিয়মিত হোম ওয়ার্ক করা
আপনাকে আপনার হোম ওয়ার্ক অথবা বাড়ির কাজ নিয়মিত করতে হবে। ক্লাসের মধ্যে যেই পড়া গুলা দিয়ে দেবে সেই পড়া গুলো পরের দিন ঠিকই কমপ্লিট করে ক্লাসে জমা দিতে হবে।
৭/ গ্রুপ স্টাডি
আপনার ক্লাসের মধ্যে আপনার সহপাঠী যারা আছে তাদের সাথে অবশ্যই পড়াশোনা বিষয়ক আলোচনা সব সময় চালিয়ে যেতে হবে। যখন বইয়ের কোন অংশে কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হবে অথবা অংক করতে সমস্যা হবে, তখন একজন আরেকজনের সাথে অবশ্যই আলাপ-আলোচনা করবেন। আপনি যে বিষয়টা জানবেন না, সেই বিষয়টা আপনার সহপাঠী জানবে এবং আপনাকে বুঝিয়ে দিবে। আবার আপনি এমনও বিষয়ে জানবেন যা আপনার সহপাঠী জানবে না। কাজেই তখন আপনি আপনার সহপাঠীকে অবশ্যই হেল্প করবেন। এভাবে একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করে গ্রুপ স্টাডি করার মাধ্যমে পড়াশোনায় অনেক দূর আগানো যায়।
৮/নিয়মিত হওয়া:
সব সময় পড়াশোনায় নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন আপনি আপনার ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকবেন। তাহলে দৈনন্দিনের পড়া দৈনন্দিন আপনি জানতে, বুঝতে ও শিখতে পারবেন। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না হলে পড়াশোনার প্রতি একটা অনীহা জমে যায় অর্থাৎ পড়াশোনায় কোন আগ্রহ থাকে না। আর যদিও কোন ক্লাসে পড়া মিস হয়ে যায়, তা অবশ্যই শিক্ষকদেরকে ফোন করে অথবা সহপাঠীদেরকে ফোন করে জেনে এবং বুঝে নেবেন।
৯/বই সাথে রাখা:
যখন যে বিষয়ের উপর ক্লাস হবে, সেই বিষয়ে বই অবশ্যই সাথে রাখবেন। কারণ বই সাথে রাখলে শিক্ষকরা পড়ানোর সাথে সাথে আপনি বইতে দাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার পড়াশোনা করতে সুবিধা হবে এবং পড়া খুব সহজে মনে থাকবে। অপরের বইয়ের উপর যদি নির্ভর করেন তাহলে আপনি অপরের বইতে দাগাতে পারবেন না বা লাগালেও তো সেই বইটি আপনার কাছে থাকতেছে না।
আর বইটি যদি ভারি হয় তাহলে অবশ্যই কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নেবেন। নয়তো সেই বইয়ের পিডিএফ ফাইল করে মোবাইলে রাখবেন। যখন যে অধ্যায় পড়ানো হয়, সেই অধ্যায় মোবাইল থেকে দেখে শিক্ষকরা পড়ানোর সাথে সাথে মিলিয়ে নিবেন।
১০/ অলসতা না করা:
অনেকেই পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অলসতা। অলসতা যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারবেন না। আজকে একটি পড়া কমপ্লিট করার দরকার আপনার। কিন্তু আপনি ভাবলেন আজকে না পড়ে কালকে আপনি পড়বেন যদিও আপনার হাতে প্রচুর পরিমাণে সময় আছে। এটা হচ্ছে অলসতার একটি বড় লক্ষণ। আপনাকে অলসতার বিরুদ্ধে নিয়মিত যুদ্ধ করতে হবে। অলসতা দূর করতে পারলে আপনি পড়াশোনায় সফল হবেন।
১১/ স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া:
এটা কিন্তু আপনার পড়াশোনা করার একটি মূল শর্ত। আপনাকে নিয়মিত ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হলে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। আপনার স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে শুধু আপনার পড়াশোনা কেন, কোন কাজেই মন বসবে না। আপনার শরীর এবং স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে আপনি পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে পারবেন। স্বাস্থ্য, শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে আপনি হাজারো চেষ্টা করে পড়াশোনায় মন আনতে পারবেন না। কাজেই ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হলে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা জরুরি এবং সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
১২/ অতিরিক্ত চাপ সামলানো:
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের পড়াশোনায় অনেক চাপ পড়ে। যেমন হোমওয়ার্ক ,এসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার পরীক্ষা, একই দিনে একাধিক পরীক্ষা ইত্যাদি। এই মুহূর্তে এই সকল চাপগুলো আপনাকে একের পর এক করে নিতে হবে। আপনাকে এই সময়টাতে আপনার পড়াশোনাগুলো একের পর এক করে সুসম্পন্ন করতে হবে। আপনাকে তখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু সরে আসতে হবে এবং ঘোরাফেরা থেকে একটু বিরতি নিতে হবে।
১৩/ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
মাথার ব্রেনকে ঠান্ডা রাখার জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এতে করে আপনার মাথার ব্রেন ভালো থাকবে ও পড়াশোনায় খুব সহজেই মনোযোগ আসবে। নিয়মিত দুধ খেতে পারেন। দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। নিয়মিত দুধ খেলে আপনার পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে ও মেধা ভালো থাকবে।
১৪/ স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখা:
আপনি যদি একটানা পড়াশোনা করতে থাকেন তাহলে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে আপনার স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে কাজ করবে না। আপনার পড়াশোনা আগের মতো বেশি পরিমাণে মনে থাকবে না। তো এই বিষয়টি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো আপনাকে একটু বিরতি দিয়ে তারপরে পড়াশোনা করা। তাছাড়া পড়াশোনার মাঝখানে একটু ঘুম দিল স্মৃতিশক্তির পরিমাণ একটু বেড়ে যায়। কাজেই পড়াশোনার ক্ষেত্রে ঘুমের বিষয়টা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য স্পেশাল খাবার খেতে পারেন। বেলপাতা ঘিয়ে ভেজে খেলেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৫/ নিজে শিখে অন্যকে শিখানো
আপনি যা কিছু পড়াশোনা করেন না কেন, যতই পড়াশোনা করেন না কেন, আপনি যদি নিয়মিত প্র্যাক্টিস না করেন তাহলে কিন্তু তা ভুলে যাবেন। তো আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হলে আপনার উচিত হবে নিয়মিত প্র্যাক্টিস করা। নিয়মিত প্র্যাক্টিস করার জন্য আপনি আপনার বন্ধুকে আপনি যা শিখেছেন তা শেখাতে পারেন। অপরকে শেখানোর মাধ্যমে আপনার পুরাতন পড়াশোনাগুলো মাথায় আবার নতুন করে প্র্যাক্টিস করা হচ্ছে। এতে করে আপনার ব্রেনে পড়াশোনার স্থায়িত্ব্যকাল বেশি পরিমাণে হবে।
১৬/ নোট করা:
আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ ট্রফিকস নোট করে রাখতে হবে। একটি নতুন খাতা কিনে অবশ্যই সে খাতায় আলাদাভাবে আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ ট্রফিকস নোট করে রাখবেন। তাহলে আপনার পড়তে খুবই সুবিধা হবে। আর পরীক্ষার সময় আসলে সেই নোট খাতা দেখে গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনাগুলো বারবার রিভিশন দিতে পারবেন। তাতে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৭/ব্যায়াম করা:
ব্যায়াম করলে আপনার শরীর, স্বাস্থ্য ও মন ভালো থাকবে। ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়াম করলে শরীরের নানান অংশ থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন নিঃসৃত হওয়ার কারণে আপনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পড়াশোনায় আপনার মনোযোগ আকর্ষণ হবে।
শেষ কথা
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীগণ, আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার ১৭ টি নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের পড়াশোনার বিষয়ে ব্যাপক পরিমাণ সহায়তা দেবে। পড়াশোনা রিলেটেড আরো কিছু জানতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে নক করবেন। সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
আরো জানুন: