আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক সমাজ আজকে আপনাদের সাথে আমি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার যাবতীয় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
জন্ম নিবন্ধন কি
একটি শিশু জন্মের পর থেকে যে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি নাম পায় এবং সেই দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে সেই নিবন্ধনকেই জন্ম নিবন্ধন বলে।
জন্ম নিবন্ধন কেন করতে হয়
প্রত্যেকটা দেশেই জন্ম নিবন্ধন করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। ঠিক তেমনি আমাদের দেশ বাংলাদেশেও জন্ম নিবন্ধন করার আইন রয়েছে। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পরই তার জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে সেই শিশুটির একটি পরিচিতি প্রকাশ পায়। জন্ম নিবন্ধনে শিশুর একটি নাম উল্লেখ করা থাকে এবং সেই নামে সারাজীবন মানুষ তাকে চিনে। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশু বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। কোন শিশুর জন্য যদি জন্ম নিবন্ধন করা না হয় তাহলে সেই শিশু বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কখনোই গণ্য হবে না।
সুতরাং তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভে এবং একটি নামসহ পরিচিতি প্রকাশ পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধন কি কাজে লাগে
জন্ম নিবন্ধন নানান ধরনের কাজে লেগে থাকে। এক কথায় একটা শিশুর ছোট থেকে বড় পর্যন্ত যাবতীয় সকল কাজে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে থাকে। তো জন্ম নিবন্ধনটি কিভাবে কাজে লাগে তা নিচে উল্লেখ করা হলো
১/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে গেলে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন পড়ে।
২/ সেই শিশু যখন ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে যায় তখন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন পড়ে।
৩/ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কাজ করার জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন পড়ে।
৪/ আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
৫/বিবাহ করতে গেলে জন্ম নিবন্ধন লাগে।
৬/ পাসপোর্ট করতে গেলে জন্ম নিবন্ধন লাগে।
৭/ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইন পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন লাগে।
৮/ ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন লাগে।
৯/ ব্যাংকের নতুন একাউন্ট খোলার জন্য জন্ম নিবন্ধন লাগে।
১০/ যেকোনো নিজস্ব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন করতে হলে জন্ম নিবন্ধন লাগে
১১/ বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করতে গেলে জন্ম নিবন্ধন লাগে।
১২/ টিআইএন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন লাগে।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি লাগে
একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখনই তার জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। তবে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধনের জন্য কিছু ডকুমেন্টস লাগবে। যেমন: টিকা কার্ড বা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যায়ন পত্র, বাসার হোল্ডিং নাম্বার, পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র এবং অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার। এই ডকুমেন্টসগুলো আপনার থাকলে আপনি অবশ্যই আপনার যেকোন শিশু বা বাচ্চার জন্য জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন
আপনাকে এখন থেকে পৌরসভা বা স্থানীয় কার্যালয়ে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য যেতে হবে না। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন। অথবা আপনি যখন আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে ফ্রি হবেন তখন যে কোন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন উপযুক্ত ডকুমেন্টস নিয়ে।
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করে অবশ্যই ওয়েবসাইটে যাবেন।
লিংক:
তো তারপর একটি ফর্ম চলে আসবে আপনার কাছে। সেই ফর্মে আপনার কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইবে এবং সেই তথ্যগুলো দিয়ে একের পয এক করে সকল ডকুমেন্টস দিয়ে ফিলাপ করুন। পরবর্তীতে আপনার সকল ডকুমেন্টস দেওয়া সুসম্পন্ন হয়ে গেলে আপনি আবেদনটি সাবমিট করুন অনলাইনে। ব্যাস আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা হয়ে গেল। এরপর আবেদনটি অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে আপনার স্থানীয় কার্যালয়ে জমা দিন। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আপনি আপনার আবেদনের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়ে যাবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই
আপনার যখন আবেদন সম্পূর্ণরূপে হয়ে যাবে এবং আবেদনটাই একসেপ্ট করা হবে তখন আপনি অনলাইনের মাধ্যমে আপনার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। অর্থাৎ অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন টি আছে কিনা সেটা আপনি চেক করতে পারবেন ঘরে বসেই। চেক করার জন্য অবশ্যই নিচের লিংকে ক্লিক করবেন।
লিংক:
এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধনের নাম্বারটি চাইবে এবং আপনার জন্ম তারিখ চাইবে। সেগুলা দিয়ে আপনি আবেদনটি দেখার জন্য অনলাইনে সাবমিট করুন। এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধনের মূল কপি অনলাইনে চলে আসবে এবং সেটি আপনি কোন কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারবেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, আমাদের উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজকে আপনারা জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি জানতে পেরেছেন। জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে আপনাদের কোন জায়গায় বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করবেন এবং আমরা আপনাদেরকে খুব সহজেই রিপ্লাই করে আপনার কাঙ্খিত সমস্যাটি সমাধান করে দেব। আসসালামু আলাইকুম।
আরো পড়ুন: