পিরিয়ড | পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
আসসালামু আলাইকুম। আমাদের এই ওয়েবসাইটে আপনারা যারা রীতিমতো আমাদের পোস্টগুলো পড়ে আমাদেরকে উৎসাহিত করছেন তাদেরকে জানাই স্বাগতম। তো আজকের পোস্ট আপনাদের জন্য একটু বেশিই উপকারী হতে যাচ্ছে। কারণ আজকে আমি আপনাদের সাথে পিরিয়ড সম্পর্কে যাবতীয় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
পিরিয়ড কি
প্রতি চন্দ্র মাসে হরমোনের প্রভাবে পরিণত বয়সের মেয়েদের জরায়ু চক্র কে এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। উক্ত পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে রক্ত যারা জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসাকেই পিরিয়ড বা মাসিক বলে।
মেয়েদের পিরিয়ড কেন হয়
পিরিয়ড তো শুধু মেয়েদেরই হয়। আরো কিছু প্রাণী যেমন বানর , হনুমান, শিম্পাঞ্জি বা ইত্যাদি প্রাণীদের মধ্যে থেকে স্ত্রী প্রাণীর দেহে এই বিষয় টা ঘটে থাকে। পিরিয়ড না হলে কখনো মেয়েদের বাচ্চা হবে না।
আর এই পিরিয়ড থাকার কারণে মেয়েরা গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারে। নয়তো তাদের কখনো সন্তান হতো না। বাচ্চা হওয়ার জন্য নারীদের পিরিয়ড হওয়া লাগে। প্রতিমাসেই মেয়েদের গর্ভাশয় তার বাইরের আবরণটাকে শক্ত করে গড়ে তোলে। এতে করে গর্ভাশয় বাচ্চা ধারণের সক্ষম হয়।
কিন্তু যখন ব্রুণ নিষিক্ত না হয় তখন গর্ভাশয় তার বাইরের শক্ত আবরণটাকে ছিড়ে ফেলে। আবার পরবর্তীতে পরবর্তী মাসে আগের মতই গর্ভাশয় তার বাইরের আবরণ কে শক্ত করে সেই মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে গর্ভাশয় প্রতিমাসেই তার বাইরের আবরণ ছিড়ে ফেলে এবং প্রতি মাসে আবার নতুন করে গর্ভাশয়ের বাইরের আবরণ শক্ত করে সেই মাসের জন্য প্রস্তুতি নেয়।
তো যেই আবরণটাকে ছিড়ে ফেলে সেই আবরণটা রক্তের সাথে বের হয়ে যায়। আর এই প্রক্রিয়া গড়ে সর্বমোট 28 দিনের মধ্যে হয়ে থাকে।
পিরিয়ড হওয়ার লক্ষণ
পিরিয়ড হলে তার অনেক লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। নিচে লক্ষণ গুলো প্রকাশ করা হলো:
১/তলপেটে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা করে,
২/ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়,
৩/ খাওয়ার প্রতি অনীহা জমে, মুখে অরুচি ভাব এসে যায়,
৪/ বুমি বুমি ভাব দেখা দেয়,
৫/ কোন কাজে কর্মে মন বসে না,
৬/ সর্বোপরি শরীরের ভেতর একটি ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাজ করে।
পিরিয়ড না হওয়ার কারণ
১/ সাধারণত ৪০ বছর বয়স হওয়ার পরে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক মহিলা ৪০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই পিরিয়ড বন্ধ হয়। কারণ তাদের ডিম্বাশয় নানানবিদ কারণে প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করতে পারেনা। বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
২/ অনেক সময় মেয়েদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন কমে যায়। যার ফলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ হিসেবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
৩/ অনেক সময় মেয়েদের মূত্রনালী ও যৌনাঙ্গের আবরণী দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে মূত্র ধরে রাখতে মেয়েরা অক্ষম হয়। অনেক সময় তারা ভারী জিনিস বহন করতে গেলে অথবা হাঁচি , কাঁশি দিলে খুব সহজে মূত্র বের হয়ে যায়।
৪/ ৩০ দশকের পরবর্তীতে সাধারণত দেখা যায় মেয়েদের ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন তৈরির পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এই মুহূর্তে ডিম্বাশফোটন প্রক্রিয়াটি অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর যদিও ডিম্বাশফোটন হয়, কিন্তু হরমোন দ্রুত আকারে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার ফলে মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।
৫/ মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সময় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের শরীরের ওজন বেড়ে যায়। তাই এ সময় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রচুর পরিমাণে ব্যায়াম করে পিরিয়ডকে স্বাভাবিক মাত্রায় আনা যায়।
পিরিয়ড না হলে করণীয়
১/ পিরিয়ড না হলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। এ সময় খাদ্যের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রেখে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন ঠিক রাখতে হয়।
২/ শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে পিরিয়ড কমে যায়। প্রতিদিন নিয়মিত পরিমাণে পানি পান করলে পিরিয়ড সঠিকভাবে হয়।
৩/ নিয়মিত সুষম ও প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন। তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাবেন। তাহলে দেখবেন আপনার পিরিয়ড আগের মত সঠিক সময়ে হয়ে যাবে।
৪/ আপনি যদি পিল সেবন করে থাকেন তাহলে আপনার মাসিক বন্ধ হলেও কিন্তু আপনি নিয়মিত পিল খাবেন। এরপরও যদি আপনার পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনি বাদামি বর্ণের পিল খেতে পারেন।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয়
হঠাৎ যদি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বাদামী বর্ণের পিল খেতে পারেন। আর সব সময় সুষম প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন। সেই সাথে তাজা ফলমূল শাকসবজি তাজা মাছ মাংস খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখতে হবে। তাহলে আপনার পিরিয়ড আগের মত নিয়মিতভাবে সচল হয়ে যাবে। এরপরেও যদি পিরিয়ডে কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
পিরিয়ডের ব্যথা যখন শুরু হয়ে যায়, তখন প্রচুর পরিমাণে ব্যথা হয়। আপনি কিছু পন্থা অবলম্বন করলে খুব সহজেই ব্যথা কমিয়ে আনতে পারবেন।
১/ কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যাথায় খুবই কার্যকরী। যখনই ব্যাথা উঠবে তখন আপনি কাঁচা পেঁপে খাবেন ,দেখবেন ব্যথা কমে গেছে।
২/ পেটের ব্যথা কমাতে আদার রস খুবই উপকারী। অথবা আপনি আদার চা পান করতে পারেন। আদা টুকরা টুকরা করে সেই টুকরোর সাথে চিনি ও গরম পানির যোগ করে দিনে কয়েকবার পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
৩/ আপনি চাইলে অ্যালোভেরার রসের সাথে মধু বিষিয়ে জুস তৈরি করে খেতে পারেন। যখনই ব্যথা উঠবে তখন এটি পান করলে দেখবেন, ব্যথা কমে যাবে।
৪/ পিরিয়ড হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় প্রচুর পানি এবং পানি জাতীয় খাবার খেলে শরীরে পানি শূন্যতা পূর্ণ হয়ে যায়।
৫/ যখন পিরিয়ডের প্রচুর ব্যথা ওঠে তখন অনেকই চেষ্টা করেও ব্যায়াম করতে পারেন না। কিন্তু একটু কষ্ট করে হলেও ব্যায়াম করতে পারলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। আপনি যোগ ব্যায়াম করতে পারেন অথবা একটু হাঁটা চলাফেরা করতে পারেন। কিন্তু কোনো ভারী কিছু এই সময়টাতে বহন করা যাবে না।
শেষ কথা:
আপনারা আমাদের উপরোক্ত আলোচনা থেকে খুব সহজেই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় এবং পিরিয়ড সম্পর্কে সকল ধরনের তথ্য জানতে পেরেছেন। পিরিয়ড নিয়ে আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আসসালামু আলাইকুম।
আরো পড়ুন:
ডায়রিয়া হলে করণীয় কি, জেনে নিন বিস্তারিত সহ